শহর বেঙ্গালুরু, ভারতের সিলিকন ভ্যালি। যেখানে বসন্ত সদা বিরাজমান। কবিগুরুর গানের তালের সাথে পা মিলিয়ে পুরো শহরটা পায়ে হেঁটে ঘুরলেও ক্লান্তি আসেনা। এখানে সব কিছুই সুপরিকল্পিত, সুনিয়ন্ত্রিত। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয়, কাবেরী যেনও কোন্ অভিমানে এই শহর থেকে তার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, মেঘ যেনও তার চুলের বাঁধন খুলতে গিয়েও আবার গুটিয়ে নিয়েছে, বর্ষার নাচন শুরু হওয়ার আগেই যেনও সে থেমে গিয়েছে। এখানে জন্ম-মৃত্যু-বেড়ে ওঠা সবই পরিকল্পিত। হাওয়া এখানে নিয়ম মেনে বয়, পাগলামি তার এখানে চলেনা। শহরের গলি থেকে রাজপথ সবই যেনও সাইন-বোর্ডের আদেশ অনুসারে চলে। এই শহর যেনও তার সৌন্দর্যের সঠিক দাম পায় না। এই শহর তার শহরবাসীকে সবকিছু ঢেলে দিলেও, এখানকার মানুষ দু-আনার হিসেব ভোলেনা, সবকিছু পাওয়ার সাথে সাথে ঘিরে রয়েছে সবকিছু হারানোর আতঙ্ক, ভয়। কবিগুরুর ভাষায় "অভাবের অভাব" তার স্পষ্টতা এখানে সুন্দরভাবে অনুভব করা যায়। তাই হয়তো এখানের সৌন্দর্য যেনও "ঝকঝকে-চকচকে" পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। সতন্ত্রতার অনুভূতি যেনও এই শহরের হয়না।
তবে এটা একটা দিক, এর আরেকটা দিক অবশ্যই আছে। যেখানে প্রভাতি সুরে পূব আকাশে সূর্য ওঠে, আজানের গানের তালে ভোরের পাখি তার পাখনা মেলে।
প্রকৃত সৌন্দর্যতা যে ঝকঝকে-চকচকের উপরে, সতন্ত্রতাই যে তার আসল প্রতিরুপ, সেই ভাবনা থেকেই লেখা কবিতাক্লাবে প্রকাশিত আমার কবিতা "শহর আমার" শহর বেঙ্গালুরুকে উৎসর্গ করে।
শহর আমার রাজা সেজে,
নিয়ম মেনে সূর্য ওঠে,
সময় হলে যায় সে ডুবে,
ঘড়ির-কাঁটা সে থামেনা যে,
শহর আমার রাজা সেজে,
শুধু রাজা হওয়া তার হলনা রে।
দিনের শেষে সন্ধ্যা নামে,
লাল-নীল বাতি জ্বলে,
আকাশ ঢাকে কালো মেঘে,
চাঁদের বরণ কেউ করেনা হে,
শহর আমার রাজা সেজে,
শুধু রাজা হওয়া তার হলনা রে।
আবার যখন রাত্রি আসে,
"আজিকেরে" সে বোতলে ভরে,
"আগামীরে" সে আপন করে,
বাঁশির সুরে আর মন ভরেনা রে,
শহর আমার রাজা সেজে,
শুধু রাজা হওয়া তার হলনা রে।
শহর আমার রাজা সেজে,
সব অট্টালিকার মাথায় চড়ে,
সোনা-দানা সিন্দুকে ভরে,
মন তবু দু-আনার হিসেব ভোলেনা রে,
শহর আমার রাজা সেজে,
শুধু রাজা হওয়া তার হলনা রে।