জীবনের সংজ্ঞা কি?
কেবলই বেঁচে থাকা?
জীবিত থাকা?
জীবিত থাকা কি কেবলই শরীরে প্রাণের সঞ্চার?
হৃৎপিণ্ডের অবিরাম স্পন্দন?
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষ্ঠু কর্মসম্পাদন?
শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপের সম্পূরণ?
না, জীবনের বহিঃপ্রকাশ কেবলই জীবিত থাকা নয়,
চলৎশক্তিসম্পন্নতা নয়,
সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক উপস্থিতি নয়,
সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সচলতা নয়,
আপাতদৃষ্টে ভারসাম্যপূর্ণ মানসিক স্থিতি নয়,
জীবন হল দেহে আত্মার প্রকাশ,
সংবেদনশীলতার উদ্ভব,
মনুষ্যত্বের বিকাশ,
কর্মদক্ষতার অর্জন,
প্রতিবন্ধকতার জয়।
কেবলই হৃৎস্পন্দনের অনুভূতি জীবিত থাকার প্রমাণ নয়,
জীবিত থাকা হল হৃদয়ে অনুভূতির উপলব্ধি,
কোমলতা ও কঠোরতার সুষম সহাবস্থান,
স্পর্শকাতরতার অস্তিত্ব,
অনুরণনের ক্ষমতার প্রস্ফুটন।
বৈকল্য জীবনের ব্যর্থতা নয়
বিকলতা ত্রুটির প্রতিশব্দ নয়,
অক্ষমতা জীবনের শেষ নয়,
পঙ্গুত্ব জীবনের অংশ নয়,
বিকলাঙ্গতা জীবনের কোন বাধা নয়,
অঙ্গহীনতা জীবনের অসম্পূর্ণতা নয়,
জীবন হল আত্মসম্মান,
আত্মতুষ্টি,
স্বয়ং এর প্রতি এক অগাধ প্রেম,
আপনার ভিতর সম্পূর্ণতার খোঁজ,
নিজ যোগ্যতার উৎকর্ষসাধন,
আপন সম্ভাবনার আলোকে স্বপ্ন নির্ধারণ,
প্রয়োজনানুযায়ী লক্ষ্য পূরণে বিকল্প পথ অনুসরণ,
বিদ্যমান সামর্থ্যহীনতার ভিন্নধর্মী শক্তিতে রূপান্তরকরণ।
শরীরসম্বন্ধীয় ধর্ম পালনই জীবিত থাকা নয়,
কেবলই আয়ুষ্কালের অতিবাহনই জীবিত থাকা নয়,
কিছু সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনই জীবিত থাকা নয়,
জীবিত থাকা হল শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির মধুর সম্মিলন,
উপভোগ্য জীবৎকাল যাপন,
আনন্দপ্রাপ্তির দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন,
পুলকের বিস্তারে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন,
নিঃস্বার্থতার আগলায়ন,
সমাজকল্যাণের পথে চলন,
কর্তব্যপরায়ণতায় হর্ষের অনুসন্ধান,
নিজগুণে সম্মানের আদায়করণ,
ভালোবাসার বিনিময়করণ।
মৃত্যুতেই কি জীবনের পরিসমাপ্তি?
না, কেবল দৈহিক মরণই জীবনাবসান নয়,
জীবনাবসান হয় হৃদয়হীনতায়,
মানসিক বিকৃতিতে,
স্বার্থান্বেষী চিন্তাধারায়,
একগুঁয়ে চেতনায়,
বেপরোয়া জীবন নির্বাহে,
সজ্জনের অবমূল্যায়নে,
কদরের উপেক্ষায়,
আপনজনের প্রতি অসম্মানে,
অপকর্মের পরিণামে অপ্রত্যাশিত নির্ভীকতায়।
মৃত্যু কি জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি?
না, জীবনের সর্বশেষ পরিণতি হল আত্মতৃপ্তির লাভ,
পরিপূর্ণতার আস্বাদ,
সার্থকতার অনুভব,
নিজ কর্মমহিমায় মৃত্যুঞ্জয়ীতার নাগাল।