ওগো, তুমি আমায় অনুভব করতে পারো?
আমার স্পর্শ,
আমার হৃদস্পন্দন,
তোমার জন্য আমার অন্তরের আকুলতা,
তোমায় শ্রবণের জন্য আমার হৃদয়ের ব্যাকুলতা,
তোমার সাথে কথোপকথনের জন্য আমার অন্তরাত্মার আকুতি,
তোমার সহিত সুখ-দুঃখ ভাগাভাগির জন্য আমার মিনতি।
বেশ কয়েক বছর হল তুমি নিথর
দৈহিক ভাবে নিশ্চল,
মানসিকভাবে নিশ্চুপ।
কেবল তোমার দর্শনেই সীমাবদ্ধ আমার চক্ষুসুখ
হৃদপিণ্ডের সচলতায় নির্দিষ্ট আমার পুলক,
নিঃশ্বাসের বহমানতায় পরিধিস্থ আমার উল্লাস,
দেহে প্রাণের উপস্থিতিতে ব্যাপৃত আমার পরিতোষ।
প্রিয়, তোমার ললাটে আমার চুম্বনে,
তোমার অনুভূত হয় কি শিহরণ?
তোমার দেহে আমার হাত বুলানোয়,
তোমার হৃদয়ে কি হয় অনুরণন?
আমার অশ্রু জলের স্পর্শে,
তোমার শরীরে উপলব্ধ হয় কি কম্পন?
বড় অভিমান আমার তোমার উপর
আমার অন্তর্বেদনায় তোমার নিরুদ্বিগ্নতায়,
আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তোমার অচেতনায়,
বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও তোমার উপেক্ষায়,
আমার ভালোবাসার প্রতি তোমার অবহেলায়,
তোমার স্বার্থপরতায়।
আমি জানি, এসব অভিমান ভিত্তিহীন
কেবলই প্রলাপ,
শুধুই সত্য স্বীকারে অস্বীকৃতি,
অবশ্যম্ভাবী ভবিষ্যতের প্রতি অমান্যতা,
কেবলই মিথ্যে আশায় বুক বাঁধা।
ওগো, তোমার ভালোবাসা বিশুদ্ধ
আমাদের প্রেম পরিশুদ্ধ,
আমাদের পারস্পরিক আকাঙ্ক্ষা পবিত্র,
আমাদের নৈকট্য নিষ্পাপ।
মনে পড়ে তোমায় প্রথম দেখার দিনটির কথা
তোমার লাজুকতা,
তোমায় দর্শনে আমার মুগ্ধতা,
তোমার সারল্যে আমার মোহগ্রস্ততা,
তোমার সান্নিধ্যে এক পরম আনন্দময় জীবন কাটানোর বিশ্বস্ততা।
স্মরণ করি, আমাদের বিবাহের দিনটির কথা
এক অবিস্মরণীয় প্রারম্ভ,
আমাদের একাত্মতার,
সঙ্গলাভের পুলকের,
আমাদের দাম্পত্য ঘনিষ্ঠতার,
সাংসারিক আহ্লাদের।
তোমার কি মনে পড়ে আমাদের একসাথে কাটানো দিনগুলি?
আমাদের একান্তে কাটানো সময়গুলো,
আমাদের অন্তরঙ্গতার মুহূর্তগুলো,
আমাদের মিলনের ক্ষণগুলো?
তুমি আমার জীবনকে করেছিলে
অকৃত্রিম ভালোবাসায় পরিপূর্ণ,
স্নেহ, মায়া, মমতায় সম্পূর্ণ,
পরম যত্নে নির্মল হর্ষের আবাস,
অপরিসীম কদরে পরিতোষের নিবাস।
কিন্তু আজ তুমি তো আমার সঙ্গে নেই
আছো কেবলই আমার কাছে,
আমার পাশে নেই,
আছো শুধুই সম্মুখে,
আমার প্রাণোচ্ছলতায় নেই,
আছো কেবলই আমার জীবনে।
এমনই যদি নিশ্চিত ছিল
তাহলে কেন আমায় এতো ভালোবাসলে?
তোমাতে আমায় অভ্যস্ত করলে?
আমায় আদর যত্নে ভরিয়ে দিলে?
তুমি হীনা আমার জীবন ধারণ অসম্ভব করে দিলে?
আমায় অসম্পূর্ণ করে দিলে?
ওগো, বড়ই স্বার্থপর আমি তাই না?
কেবলই নিজের বেদনায় আমি ভুলে গেছি,
অপ্রকাশ্যমানতায় তোমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণের কথা,
নিঃশব্দতায় তোমার অন্তরজ্বালার কথা,
অন্ধত্বে তোমার যন্ত্রণার কথা।
মাঝে মাঝে ভাবি তোমায় এরকম দেখবার পশ্চাতে আছে
আমার ভালোবাসার খামতি,
আনুগত্যের কমতি,
তোমায় সম্মান প্রদর্শনে আমার অক্ষমতা,
তোমার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে আমার অপারগতা,
সঠিক মূল্যায়নে আমার অবহেলা,
তোমার প্রাপ্যতায় আমার অযোগ্যতা।
তবে জানো, অপরিমেয় কষ্টের পরও আমি সুখী
প্রাতঃরাশে চক্ষু মেলে তোমায় দর্শনে,
কাজ শেষে বাড়ি ফেরার কারণের বিদ্যমানতায়,
তোমার পাশে বসে আমাদের সুখের স্মৃতিচারণায়,
বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তোমার কাছে ফিরে আসায়,
রজনী প্রান্তে পুনরায় তোমায় দেখবার হেতু শান্তির নিদ্রায়।
আজ তোমায় চিরবিদায় দিয়ে আসলাম
আজ তোমার মুক্তির দিন,
সকল কষ্টের অবসানের দিন,
শারীরিক শৃঙ্খল ভাঙ্গার দিন,
দিন পরম শান্তি প্রাপ্তির।
এতো দিন তো ছিলে তুমি
হয়ত আমার ইচ্ছে মত ছিলেনা,
তবুও তো ছিলে তুমি,
আমার নিঃসঙ্গতার সাথী হয়ে,
আমার অবশিষ্ট দিন গুলোয় সঙ্গী হয়ে,
আমার জীবিত থাকার কারণ হয়ে,
আমার গৃহের প্রাণ হয়ে,
তোমায় পুনরায় ফিরে পাবার সংগ্রামে আমার সহযোদ্ধা হয়ে,
আমায় নৈরাশ্যের আঁধার হতে মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে।
এখন আমার দিন কাটে একাকীত্বের অনুভবে
ঘরময় তোমার এক আশ্চর্য উপস্থিতির স্পরশানুভুতিতে,
তোমার ছেড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের যত্নআত্তিতে,
আলোকচিত্রে সময়বন্দী আমাদের সুখস্মৃতির ঈক্ষণে,
মৃত্যু শেষে তোমার সহিত সাক্ষাতের অপেক্ষায়,
মহাকালের যাত্রায় তোমার সঙ্গলাভের প্রতীক্ষায়,
পরপারে আমাদের অকুণ্ঠ ভালোবাসার পূর্ণতা প্রাপ্তির প্রত্যাশায়।