আমার মা
আমার মা, এক পরম সৌন্দর্যের প্রতীক
যে সুন্দর তার জন্মগত সহজ-সরলতায়,
যে মোহনীয় তার অর্জিত আন্তরিকতায়,
যে আলোকিত তার স্বশিক্ষার আভায়,
যে অতুলনীয় তার শিল্পচর্চায়,
যে মনোমুগ্ধকর তার পরিবেশনায়,
যে প্রশংসনীয় তার পারিপার্শ্বিকতার সাথে মানানসই রক্ষণশীলতায়,
যে মনোহরী তার শালীনতায়,
যে অনুসরণীয় তার স্বভাবসুলভ উদারমনা চিন্তাধারায়,
যে সুদর্শনা তার সততা রক্ষায়।
আমার মা, এক সর্বংসহা
যার হেতু আমার প্রাণের সূচনা,
যার স্নেহ আমার শৈশবের তাড়না,
যার ভালোবাসা আমার কৈশোরের প্রার্থনা,
যার আদর্শ আমার যৌবনের ভাবনা,
যার সম্মান আমার জীবনের আরাধনা।
আমার মা, আত্ম-বলিদানের নিদর্শন
যার দিকনির্দেশনায় আমার ব্যক্তিত্বের গঠন,
যার শিক্ষার আলোকে আমার বর্তমান অবস্থার গড়ন,
যার দৃঢ়তায় আমার আত্মপ্রতিষ্ঠার বাস্তবায়ন,
যার উৎসাহে আমার উপযুক্ত লক্ষ্যের অবলোকন,
যার উপদেশে আমার সঠিক পথের অন্বেষণ,
যার মহিমায় আমার উল্লেখযোগ্য জীবনধারা বজায়করণ।
আমার মা, আমার একমাত্র বন্ধু
যার কাছে আমি সবসময় অসাধারণ,
যে বুঝে আমার সম্পর্কের সমীকরণ,
যে জানে আমার মৌনতার কারণ,
যে মানে আমার অভিমানে কালক্ষেপণ,
যে থাকে সর্বাবস্থায় আমার সহিত সর্বক্ষণ।
আজ আমি মায়ের থেকে অনেকটা দূরে
ঘুম ভেঙে হয়না মায়ের হাসিমাখা মুখ দর্শন,
করতে পারিনা মায়ের দেয়া আহারের স্বর্গসুখ আহরণ,
ঘরে ফিরে উপলব্ধি করতে পারিনা মায়ের অপেক্ষার সমাপণ,
ঘরে অনুভব করতে পারিনা মায়ের মমতায় গড়া আবাসনের প্রশান্তির বাতাবরণ,
বিকল্প যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎপর্যপূর্ণ হয়না হর্ষ-বিষাদের বর্ণন,
কাঠিন্য মোকাবিলায় অনুভূত হয়না মায়ের শক্তি প্রদানকারী যাদুকরী পরশের অনুরণন,
ব্যর্থতায় জড়িয়ে ধরতে পারিনা সমাধান প্রাপ্তির উৎসস্থল মায়ের কলেবর,
সফলতায় মায়ের বক্ষে মাথা এলিয়ে বোধ করতে পারিনা মায়ের হৃদস্পন্দন,
মায়ের আঁচলের শীতল ছায়ার অবর্তমানে সমাপ্ত হয় নিশিযাপন।
একান্তে ভাবি, কতটা স্বার্থপর আমি
চলে এসেছি মায়ের থেকে অনেকটা দূরে,
প্রাধান্য দিয়েছি শুধুই নিজের স্বপ্নকে,
উপেক্ষা করেছি মায়ের চোখের অমূল্য অশ্রুকে,
অবমাননা করেছি তার ছেড়ে না যাওয়ার আকুতিকে,
অবহেলা করেছি মায়ের মমতাময় আশ্রয়কে,
ত্যাগ করেছি মায়ের স্নেহময় আলিঙ্গনকে,
অমর্যাদা করেছি তার মানসিক শক্তি প্রদানের ক্ষমতাকে,
শুধুই মূল্য দিয়েছি নিজের উন্নতিকে।
কিন্তু হতবাক আমি, আমার ভাবনায় মায়ের প্রতিক্রিয়ায়
“তোমাকে পার করতে হবে সব বাধা,
ভুলে যেতে হবে মায়ের উপর নির্ভরতা,
অর্জন করতে হবে সকল পরিস্থিতি মোকাবিলা করবার ক্ষমতা,
জয় করতে হবে আমার শারীরিক অনুপস্থিতে অনুভূত মানসিক দুর্বলতা,
বজায় রাখতে হবে নিজের স্বকীয়তা,
মনে রাখতে হবে সাংস্কৃতিক শিক্ষা,
পূরণ করতে হবে শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রত্যাশা,
সর্বাবস্থায় বহাল রাখতে হবে ন্যায়পরায়ণতা,
অর্জন করতে হবে কাঙ্ক্ষিত সফলতা,
নিশ্চিত করতে হবে আমার দেয়া শিক্ষার সার্থকতা,
কর্মক্ষেত্র হতে হবে তোমার সাধনা,
নিজ কর্মগুনে হয়ে উঠতে হবে নিয়মানুবর্তিতার নমুনা,
অক্লান্ত পরিশ্রমে বাড়াতে হবে মাতৃভূমির উজ্জ্বলতা,
কর্মযজ্ঞ শেষে হয়ে উঠতে হবে স্মৃতিচারণা”
মায়ের থেকে দূরে থাকাতে চিন্তিত আমি
মায়ের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে,
আমার অবর্তমানে মায়ের মানসিক চাপ নিয়ে,
আমাকে নিয়ে মায়ের শূন্যতা অনুভব করা নিয়ে,
আমার চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটানো নিয়ে,
আমার আগমনের অপেক্ষায় দিনাতিপাত করা নিয়ে।
পরন্তু নির্বাক আমি, আমার চিন্তায় মায়ের আশ্বস্ততায়
“আমি হয়েছি নিজের শরীরের প্রতি অধিকতর যত্নশীল,
তোমার প্রস্থান আমাকে করেছে বহুগুণে সহনশীল,
তোমার সহিত দূরত্বে হয়েছি তোমার প্রতি অপরিসীম স্নেহশীল,
তোমার যোগ্যতা প্রাপ্তির স্বদিচ্ছা আমাকে করেছে তোমার প্রতি মর্যাদাশীল,
ঘরময় তোমার রেখে যাওয়া চিহ্ন আমাকে করেছে তোমার প্রতীক্ষায় ধৈর্যশীল,
তোমার স্পর্শব্যতীত রাত্রিযাপনে থাকবো আমি তোমার উদ্দেশ্য সাধন পর্যন্ত স্থিতিশীল,
তোমার সফলতা প্রাপ্তি অবধি হবোনা আমি মরণশীল”