প্রিয় অমিত,
অবশেষে তুমি এ ভরা বসন্তেই এলে? তুমি জান না এ কেমন তোমার ফিরে আসা। আসে ত অনেক কিছুই। যেমন শীতের শেষে বসন্ত, গ্রীষ্মের পর বর্ষা, রাতের পর ভোর, দুঃখের পর কান্না, আনন্দের পর হাসি, ঠিক জীবনের পর মৃত্যুর মত। কিন্তু তোমার ফিরে আসা আমার কাছে জীবন্মমৃত থাকার পরে প্রাণ ফিরে পাওয়া। মরুভূমির বুকে একফোঁটা জল। একটা মৃতপ্রায় জীবনে শান্তির স্পর্শ।
সব ছিল তোমার ছেড়ে যাওয়া আঙিনায়। রোজ সূর্য উঠত, সূর্য অস্ত যেত, গাছের শুকনো পাতা পড়ত, হাওয়ায় উড়ে যেত। কুঁড়ি আসত তাতে, ফুল ফুটত। সেই উঠোনের পাশ দিয়ে যথাসময় গলায় ঘন্টা বাঁধা গরুটা পার হয়ে যেত রোজকারের মত। কত চেনা অচেনা লোকেরা চলে যেত। সব কিছু হত শুধু নিয়ম কে সামনে রেখে। তাদের সময়ের সাথে চলতে হয় তাই চলত। কোন প্রান ছিল না সে চলায়। শুধু অপেক্ষা ছিল সেই ঘাস গুলোর যাদের তুমি কথা দিয়ে গেছিলে। অপেক্ষা ছিল সেই বট গাছটার তোমার দৃষ্টির, অপেক্ষা ছিল সেই চৌকাঠের, যেখানে তোমার অবর্তমানে কেউ দাঁড়ায় নি। তুমি ছিলে না তাই কেউ গাছের সামনে বসে দু দন্ড ওদের গায়ে হাত বুলিয়ে দুটো কথা কান পেতে শোনে নি, কেউ কড়া নাড়লে এক মুখ হাসি নিয়ে যেন তাঁর আসাটাই সেই মুহূর্তে সব থেকে প্রত্যাশিত ছিল এই ভেবে তাকে আপ্যায়ন করেনি।কেউ বিকেলের পড়ন্ত রোদে পিঠ দিয়ে বসে বই পড়ে নি বা ক্ষনিক ক্লান্তি তে ঘামে ভেজা চুল আলগোছে বালিশে মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নেয় নি।
তুমি নেই তাই কোথাও প্রাণ নেই। কোকিলটা কবে শেষ ডেকে উড়ে গেছে এ বসন্তে তোমারি অপেক্ষায়। পায়রা গুলো দিকভ্রষ্ট হয়েছে তোমার অবর্তমানে।
আজ খবর পেয়ে এসেছে সবাই। তুমি জানই না কেমন করে তোমার উপস্থিতি তোমারই চোখের অন্তরালে চারপাশে প্রকৃতিকে প্রাণ দেয়। এত কিছুর ভিতর আমি কোথায় জান? তোমার পায়ের পাতা ভেজা জলে, যার গায়ে তোমার দুঃখের বা আনন্দের সবটুকু লেগে থাকে। দেবে আমায় এমন করে থাকতে? তোমার অনুভূতির সঙ্গে জীবন্ত হয়ে বেঁচে থাকতে, সারাজীবন? বৃষ্টি?
ইতি লাবণ্য