প্রিয় অমিত,
জৈষ্ঠের গেরুয়া রোদ বাগানের গাছ পালার ওপর এসে পড়েছে। চারপাশ একই রকম। সেই দীর্ঘ দুপুর ঘুঘুর একটানা কাছে আসার ডাক। পাতাদের মাটির সাথে সখ্যতা। টুপটাপ শুকনো অর্জুনফলের ঝরে পড়ার ছটফটানি।
প্রায় পাক ধরা আমের গন্ধে মৌমাছি দের জটলা। ছাতারে আর কাঠ শালিকরা ঝাঁক বেঁধে গোল টেবিল অধিবেশনে ব্যস্ত। কোমর বেঁধে দুই চড়াই দম্পতির চিল চিৎকার করে ঝগড়া। তার পরে পরেই একে অপর কে আদিখ্যেতার চরম আদর। আরও কত কি সব সেই এক। শুধু খাঁকি ঝোলা কাঁধে সাইকেল চড়ে বুড়ো ডাকপিয়ন আর আসেনা।
ঠিকানার তো কোন বদল হয়নি নি। একই আছে নীল গেটের ওপর লেখা নামটাও। তবু কেন আসেনা জানি না।
তুমি তো রোজই বলো কত শত চিঠিই আমার নামে সারা দুপুর ধরে লিখেছ। তবে? খামের মুখ কি ভাল করে বন্ধ করনি? তাই কি ঝড়ে উড়ে গেল সে চিঠিরা হলদে পাতাদের সাথে ভাব করে? নাকি মাঠ ভরতি ঘাসে মিশে গেল পথিকের পায়ে পায়ে? সন্ধান পাইনা কিছুই। আর কাকেই বা জিজ্ঞাসা করি, সব তো ফাঁকিবাজ। নিজের কাজ টুকু গুছিয়েই পিঠটান দেয়।
গতকাল মাঝ দুপুরে ঠক ঠক করে এক নাগাড়ে কাঠ কেটে ঘুমের বারো টা বাজাচ্ছিল এক ছোকরা কাঠঠোকরা। তাকে ডেকে বললাম দেখে আয় আমার কোন চিঠি এসেছে কিনা। বাকি কাঠ ফিরে এসে কাটিস। সে গেল তো গেলই আর আসেনি।
বোসেদের গরুটাও ভারি কুঁড়ে। রোজ সন্ধ্যের আগে গলার ঘন্টা বাজিয়ে গেটের সামনে এসে দাঁড়াবে। যেন বাবু এলেন তোলা তুলতে। আমিই অবিশ্যি তার এমন বদ স্বভাবের জন্য দায়ী। প্রথম প্রথম আসতে চাইতো না কাছে। আমি রোজ সন্ধ্যেয় দাঁড়িয়ে দেখতাম ওর গর্বিত ভঙ্গিতে বাড়ির রাস্তায় যাওয়া টুকু। আস্তে আস্তে সেও কলা'টা মুলোটায় বশ হয়ে পড়ল। এখন রোজ আসে। পাওনা নিয়ে আবার হাঁটা দেয়। তাকেও বললাম, যাস তো ওই মাঠের পাশেই পোস্ট অফিস টায়।খোঁজ নিয়ে আসিস আমার কোন চিঠি এসেছে কিনা।
যায়নি না বোঝেনি বুঝিনা বাপু, আমি কিছু শুধোলেই মাথাটা নেড়ে পাওনা টা মুখে নিয়ে বাড়ির রাস্তা ধরে। চিরক্কেলে ভুলো মানুষদের এমন টাই হয় আমি জানি। এবার লিখে অবশ্যই খামের মুখ বন্ধ করে পাঠিও কেমন? আর হ্যাঁ, এখানে প্রচন্ড দাবদাহে সকলে খুব কস্ট পাচ্ছে। তুমি শিলং থেকে বেশ কিছু টা মেঘ আর কয়েক পশলা বৃষ্টিও পাঠিও।
ইতি তোমার লাবো ( লাবণ্য)!
পুনশ্চ- আমার এখানে বর্ষা এলেই সুদে আসলে মেঘ বৃষ্টি ফেরত দিয়ে দেব। তুমি তো জানো তোমার লাবণ্য সমস্ত কর্জ সুদে আসলে ফেরত দেয়।