প্রিয় লাবণ্য
মাঝে মাঝে মনে হয় সত্যি কি আমার আর কিছুই বাকি নেই তোমায় লেখার মত বা তোমাকে নিয়ে লেখার মত। যে আমি তোমায় বলতাম তোমায় নিয়ে আমি মহাকাব্য রচনা করতে পারি সেই আমি র তোমায় নিয়ে লিখতে কলম থেমে যাচ্ছে?
সেই সেদিনের কথা মনে পড়ে তোমার?তুমি কোমরে আঁচল গুঁজে রান্না ঘরে।আমি বারান্দায় বসে মুগ্ধ হয়ে তোমায় দেখছি, দেখছি..... দেখছি... আরও দেখছি। কি যে দেখছি বা কি দেখতে চাইছি তা জানি না।তবু দেখছি মন প্রাণ ঢেলে। তুমি নেই ফাঁকা, তুমি আছো তাই ভরাট সেই ফাঁকা জায়গা টা । সেই তুমিময় ভরাট জায়গা টুকু দেখছি। তুমি নড়ছ, তুমি সরছ, তোমার নড়াচড়ায় তোমার শাড়ির ও শরীরের খাঁজ ভাঁজের রেখিচিত্র পাল্টে যাচ্ছে মুর্হুমুহু।
কাউকে বা কিছু কে দেখার মধ্যে ও যে একটা আলাদা আনন্দ আছে, ব্যতিক্রমী অনুভূতি আছে, একটা অদ্ভুত তৃপ্তি আছে তা যেন নতুন করে আবার তোমার কক্ষপথে এসে আর একবার উপলব্ধি করলাম। ঐ টুকু তেই শান্তি।সূর্য হবার শাস্তি আমি চাই না। আমি চাঁদের মত উপগ্রহ হতে চাই তোমায় কেন্দ্র করে।
সেই সুন্দর লাল হলুদ রঙের শাড়িটা। কালো রং'র পরে যেন এই রং টা তোমার ই জন্য আবিস্কৃত হয়েছিল।তাতে ততটা লাল আর ততটা হলুদ ততটুকুই থাকবে যাতে তুমি একটা একটা লাল হলুদ ফুল হয়ে ফুটে থাক।
কানের পাশে থেকে কপালের পাশে অবধি চূর্ণ চুল ঢেকে রেখেছে তোমার মুখাবয়ব। তোমার অজান্তে তোমায় আড়ালের আয়োজন আমার নজর থেকে। আসলে শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তোমার ইচ্ছায় চলে। তোমার মুখ আমার থেকে লুকিয়ে রাখবে !! দেবে না তোমায় লজ্জায় রাঙা হতে।
অবাক হয়ে দেখতে থাকি তোমার একাগ্রতা, মনোনিবেশ কাজের বাহুল্যে।কড়াই 'র সামনে অল্প একটু ঝুঁকে তোমার আবেগ , তোমার ইচ্ছা, আর অপার ভালোবাসার সাথে এক হাতা দরদ, এক চামচ আত্মবিশ্বাস, এক মুঠো তৃপ্তি মিশিয়ে প্রতিনিয়ত জীওন কাঠের উত্তাপে জারিত বিজারিত করে, সময় দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে তৈরী করছ তোমার নিবিড় নিবেদন।
আমি অবাক হয়ে দেখছি ঘাড়ের কাছে স্থির স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা স্বেদ বিন্দু। অপেক্ষা করছে তোমার অনুমতির।ঝরে যেতে চেয়েও গড়িয়ে নেমে আসছে না।
তোমার ঠোঁটের ফাঁকে একটা অম্লান পরিতৃপ্ত হাসি। আসলে যতটা যেমন ভাবে যা যা মিশিয়ে দিতে চেয়েছিলে ততটুকুই তেমন ভাবে দিয়ে তেমনই বর্ন গন্ধে স্বাদে নিবেদন করতে পারবে। এই তৃপ্তি টুকু ছাড়া তোমার আর কিছুই চাওয়া নেই। গ্রহীতা র এক টুকরো তৃপ্তি র হাসি তোমায় পরিতৃপ্ত করে।
দেখছি আগুনের উত্তাপে তোমার মুখ রক্তাভ হয়েছে। উদ্বিঘ্ন কপালের ভাঁজে টিপের অস্থি্রতা প্রকাশ পাচ্ছে। পিপাসায় তোমার বুক ফেটে যাচ্ছে। কোমরের যন্ত্রনায় তুমি ক্লান্ত হলেও তোমার নিবিড় নিবেদনে বিন্দু মাত্র অবহেলা নেই। তোমার একাগ্রতা য় কোন ফাঁক নেই। তোমার মত ই তারা পূর্ণ।
মনে মনে মিশে যাই তোমার অস্তিত্বে। মনে হচ্ছিল চূর্ণ চুল কানের পিছনে যত্ন করে সরিয়ে রাখি সিন্ধুকে রাখা গয়নার মত। থমকে যাওয়া শ্বেদ বিন্দু শুষে নিয়ে যাত্রাপথ থামিয়ে দি। মনে হচ্ছিল ঠান্ডা জল হয়ে তোমার শরীরে প্রবেশ করি।যেখানে যেখানে যত পিপাসা আছে,সব নিবারণ করি । যেখানে সবটুকু উত্তাপ জমান আছে ওখানে সব কিছুর উত্তর হয়ে যাই।
তোমার শরীরে যেখানে যত ক্লান্তি জমা আছে সব আমি দু হাত ভরে গ্রহণ করি।পরিবর্তে তোমার ঐ তৃপ্তির হাসি টুকু র সবটা আর তোমার যত্ন, আবেগ, অনুভূতি দিয়ে বানানো নিবেদনের এক টুকরো একবার তুমি ঠোঁটে ছুঁয়ে প্রসাদ করে দিও। বাকি নিবেদন দিও তোমার ঈশ্বরের কাছে তোমার প্রসাদের উদ্দেশ্য।
ইতি তোমারই অমিত