মাছরাঙার চেয়েও ধৈর্যশীলা হয়ে কাটিয়ে দেই প্রহর। শতদল ভরা সরোবরে আনমনে ছুড়ি ঢিল। জলে সৃষ্ট তরঙ্গ আমার দীর্ঘশ্বাসের সমান হয়ে ক্রমে মিলিয়ে যায়। তুমি আসবে বলেছিলে মধ্য দুপুরের নিরালায়। আমি কতো কথা জমিয়ে রেখেছি মনে। কতো বায়না, কতো বাহানা, কতো না অনুযোগ! কিছুটা বেশি সময় নিয়েই তুমি আসতে চেয়েছিলে। তোমাকে সমুখে পেলে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। তুমি আমার হাতটি ধরতেই আর মেলে ধরা হয়না কথার ঝাঁপি। তখন চোখে চোখে শুরু হয়ে যায় চখাচখির প্রণয়। ওষ্ঠাধরের মিতালীতে এগিয়ে চলে অব্যক্ত প্রণয়কথা। প্রতিশ্রুতিগুলো ঝালিয়ে দেখার ফুসরত থাকে না। আজো কি এমনি কেটে যাবে সময় নৈশব্দঘোরে!
তুমি বলেছিলে একসাথে পূর্ণিমা করবে যাপন।হাস্নাহেনার মালা পড়াবে আমার খোঁপায়। দূর আকাশের যতো তারকা, ততোটি চুম্বন দেবে আমার কপালে। তোমার চুলে বিলি কেটে দিলে তুমি শোনাবে বাগেশ্রীতে বাঁধা তোমার সুর। তেমনি একটি রাত কাটাবো বলে আজো স্বপ্ন দেখি।
মনে পড়ে প্রথম দেখায় তোমার মুগ্ধতা জানিয়েছিলে কবিতায়। সেই আবেশী শব্দমালায় আমি জড়িয়ে নিলাম হৃদয়। তারপর কতো কাব্যস্তুতি আমাকে ঘিরে! আমার আনকোরা মন আর উঁকি দিতে চায়নি অন্য কারো হৃদরবাগানে। তোমার শিল্পকাননের গর্বিতা রাজকন্যা হয়ে কেটে যেতে থাকে কাল। আর সুখের আফিম খেয়ে আমি অনন্ত করি তোমার প্রতীক্ষা।
আজো আমি বসে আছি পথ চেয়ে। অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরী। অনেক স্বপ্নের ব্যবচ্ছেদ করা প্রয়োজন। কাব্যের আবেশ ছেড়ে খুঁজে পেতে চাই একটি স্থায়ী ঠিকানা। একটি ঘর, দখিনা জানালা। যেখান দাঁড়িয়ে আমি দেখব তোমার ফিরে আসা। তোমার কাব্যউপমার কিছু ফুল সাজাবো ফুলদানিতে। আরাম কেদারায় ঘেঁষাঘেঁষি বসে নেবো তোমার সদ্যজাত কবিতার আস্বাদ। তোমার আত্মমগ্ন সুর সৃষ্টির আমি হব নৃত্যপর সহচরী।
ভালোবাসার অব্যয় সম্মোহন ছেড়ে আজ বাস্তবে রাখবো পা। পরিজনকে জানিয়ে দিতে চাই আমি স্বয়ম্বরা হবো। মৌসুমী ফুলের ছড়ানো পাপড়িতে হবে আমাদের ফুলশয্যা। দুষ্টু সখিদের টিপ্পনি উড়িয়ে দিয়ে দরজায় দেবো খিল। তারপর রাত জেগে মিলিয়ে নেবো প্রতিশ্রুতির সাধ্য-সাধ। প্রিয়, তেমন পরিণতি ভেবেইতো আমি দিয়েছি সাড়া তোমার কাব্যের ইন্দ্রজালে।
আজ এই প্রত্যশার নির্জনে আমি পড়েছি প্রিয় রঙের শাড়ি। কপালে দিয়েছি লাল টিপ। খোঁপায় গেঁথেছি গোলাপ। অবগুন্ঠন খুলে তুমি চিবুক ছুঁয়ে শোনাবে মিলনের গান। সে আশায় বসে আছি তোমার প্রিয় বকুল ছায়ায়। সময়ের প্রগমনে কতো মাছরাঙা দিয়েছে উড়াল প্রতীক্ষা শেষে। কেবল আমি দিয়ে চলেছি ধৈর্যের দাম। প্রিয়, এখনো তোমার হয়নি সময়? চারিদিকে কোলাহল যে যাচ্ছে বেড়ে। তবে কি আজও হবেনা তোমার ভাবনার উন্মোচন? আমি চির বন্দিনী উপমার শৃঙ্খলে!
৩০-৫-১৯। রাত ৭-৫২। সেনওয়ালিয়া