তেতাল্লিশের কোন এক ভোরে
চাঙ্গি থেকে স্রাঙ্গণ হয়ে বাতামের পথে হাঁটছি,
এবং খুঁজছি রায়হান নামের একজনকে;
শাহজাহান মামা বলেছিলেন,
তার সাথে দেখা হলেই তুমি পেয়ে যাবে,
অনাবিষ্কৃত ছায়াপথের
পৃথিবীময় সেই গ্রহের সমৃদ্ধ জীবনের সন্ধান,
জানতে পারবে তার ইতিবৃত্ত।
যাকে তুমি খুঁজে চলেছো সময়ের ব্যাপ্তির ভেতর;
বাহ্যিক সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে গিয়ে
যেখানে বিশ্বাস ধারণ করতে চায় সত্যকে,
যাকে খুঁজে চলেছো তুমি মুক্তির অভিপ্রায়ে।
বাতামের তীর ধরে হাঁটলেই
দেখা পেয়ে যাবে তার, এবং
পেয়ে যাবে সেই কাঙ্খিত নগরীর খোঁজ!
এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে,
ডানে মোড় নিতেই দেখলাম,
কাত হয়ে পড়ে আছে হিরোশিমা;
এর ঠিক পশ্চিম দিকে শোরগোল করে
ভার্সাই চুক্তির ছাই হাতে হেঁটে যাচ্ছে বিধ্বস্ত বার্লিন;
দিগন্ত বিস্তৃত একটি ছায়ার অস্তিত্ব দেখতে পেলাম,
কে যেন চিৎকার করে বলছে,
এটি পোল্যান্ডের আকাশ, আর
এটি বেনিতো মুসোলিনির ছায়া,
কেউ সেই বিষাক্ত ছায়া মাড়াবে না ভুলেও,
কয়েক বছর পর পর এটি দেখা যায়।
আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবলাম,
এখানে আমি কি করছি?
এটিতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঠ!
আমি স্রাঙ্গণের কাছাকাছি আসতেই দৌঁড়ে পালাতে চাইলাম
আর রায়হানের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকলাম।
আমার ডাক প্রতিধ্বণিত হয়ে
আমারই কানে ফিরে আসলো।
প্রাণপণ ছুটে চলেছি আমি,
অল্প একটু এগোতেই
সামনে দেখতে পেলাম, আকাশ থেকে মাটি অবধি ঝুলে আছে
টিপু সুলতানের জং ধরা সেই বিখ্যাত তরবারি;
যেটি গত মাসে লণ্ডনে নিলামে বিক্রি হয়েছিলো
এক কোটি চল্লিশ লাখ পাউণ্ডে।
ঘটনার প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেছে,
আকাশের সূর্যটা লাল হয়ে আসছে,
একটু পরেই নেমে আসবে মৃত্যুর মতো নিশ্চল অন্ধকার,
সামনে একটি ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে,
ডাক দিলাম, কোন উত্তর আসলো না;
ছায়াটি নড়ে ওঠলো,
অস্পষ্ট উচ্চারণে উত্তর আসলো আমি রায়হান,
ইতিহাসের একটি বাঁকে
শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে, হাত নাড়ছে,
ডান হাতে বাংলাদেশের একটি মানচিত্র!