কেউ কেউ এক টুকরো মেঘের জন্যও হাহাকার  করে,
কারো কারো বুক পকেটে নীল খাম থাকা সত্ত্বেও ভালোবাসা খুঁজে পায় না,

খাবারের টেবিলে অনেক দামি দামি খাবার,আলমারি ভর্তি থরে থরে সাজানো বাহরী কাপড়-চোপড়ের মাঝেও  কেউ কেউ পছন্দের খাবার-কাপড় খুঁজে পায় না,

তোমার মেসেঞ্জারে কত কত ভালোবাসার চিঠি পাঠিয়েছি, তবু তুমি বলেছিলে- "একটা চিঠি শুধু নীল খামে পাঠিও"।
যান্ত্রিক এই শহরে 'এয়ার মেইল' লেখা সেই নীল খাম আর চোখে পড়ে না।
অনেক পরে বুঝেছি ভালোবাসা আসলে নীল খামে নয়, থাকে হৃদয়ের মনিকোঠায়,
হরেক রকম রং এর মাঝে ভালোবাসার রং কোনটা আমি আজও খুঁজে পাইনি।

সেদিন ডাকহরকরা বিবর্ণ নীল খামের চিঠি দিয়ে গেল ;
আমরা চোখের বিস্ময়কর চাহনি দেখে বলল—
"অনেক অনেক চিঠির মাঝে এই চিঠিটা কোথায় যে ছিল আজ অনেক দিন পর তার নজরে পরেছে"
আমার এমনই হয়! অনেক কাজের মাঝে আমার কোন কাজটা বেশী দরকারি আজও বুঝতে পারিনি।

নীল খামটা খুলে চিঠি পড়া শুরু করতেই পরিচিত হাতের লেখা পেলাম—

" প্রিয়,

এই চিঠি যখন পাবে হয়তো আমি এই ধরনীতে নেই। আচ্ছা 'নীল' তুমি বোকার মত আমাকে ম্যাসেঞ্জারে চিঠি লিখতে কেন? তুমি কি ভালোবাসতে আমায়? যদি ভালোবাসতেই তাহলে বলনি কেন আগে। জানো আমার এক টুকরো "নীল" মেঘ ছিল। ভেবেছিলাম তুমিই সেই 'নীল' মেঘ। কিন্তু তুমি কেন বিয়ের আগে বলনি- ভালোবাসো আমায় ।

আমার বিয়ে হলো তোমার বন্ধুর সাথেই। এরপর বিদেশ পাড়ি দিলাম। তুমি কতই না আমাদের সাহায্য করলে। বিয়ের পর আমার পানে তুমি চোখ তুলে তাকাতে না । কিন্তু কি আশ্চর্য দেখ; বিদেশ পাড়ি দেয়ার কয়েক বছর পর ম্যাসেঞ্জারে নক দিলে। আমি আশ্চর্য হতাম। নীল হতাম। ভেবেছিলাম তোমার সেই পুরান অভ্যাস কি বদলে ফেললে। অনেক মেয়ের সাথে কথা বলতে কিন্তু কাউকে নিজের করে পেতে চাওনি, এই যেমন আমাকে!

জানো বিয়ের পর তোমার বন্ধু মানে আমার স্বামী তোমাকে নিয়ে সন্দেহ করত। আমার মোবাইলে পাসওয়ার্ড দেয়া নিষেধ ছিল। প্রতি রাতে ও আমার মোবাইল চেক করত। প্রথম যেদিন তুমি ম্যাসেঞ্জারে নক করলে সেদিন ও আমায় কিছু বলেনি। আমার উত্তর না পেয়ে তুমি দিন দিন বেপোরোয়া হয়ে উঠলে। কিসব লিখতে। আমাদের সম্পর্কের মাঝে এমন কি ছিল! হয়তো সর্বোচ্চ হাতের ছোঁয়া পেয়েছি এক অন্যের।

এরপর আমার স্বামী নির্যাতন শুরু করল। কখনও মাথায়, কখনও হতে, বেল্ট দিয়ে পিঠে আর গালে বসে যেত তার আঙ্গুলে ছাপ। তোমার প্রতিটি ম্যাসেঞ্জারের ম্যাসেজ ছিল আমার নিগৃহত হবার দিন। এরপর কি হতো জানো। নির্যাতনে আমার চোখ ফুলে গেলে সেখানে নীল হয়ে যেত। হাতে প্রথমে রক্ত জমে যেত এরপর নীল কালচে হয়ে যেত। যেন আমার শরীরে মথ পোকা ঢুকেছে। ফুলে ওঠা জায়গাগুলোতে মথটি যেন বাসা বাঁধত, ওর মত হয়ে যেত আকারে, মথের অজস্র  পা  শেকড়ের মত আটকে রাখত আমার শরীর। আমার সারা শরীর একসময় ফুলে উঠল টুকরো টুকরো মথের মত। তাও বেচেঁ ছিলাম। শুধু তোমার হাতের লেখা চিঠি দেখতে চেয়েছিলাম বিধায়  নীল খামে চিঠি দিতে বলেছিলাম। দেখ চিঠির শেষ অংশটুকু আমার হাতের লেখা কেমন এলোমেলো হয়ে এসেছে। ওর শেষ আঘাতটি ছিল গতরাতে মাথায়। অনেক যন্ত্রনা নিয়ে চিঠিটা লিখছি। আমি হয়তো আর বাঁচবোনা। অনেক নীল কষ্টে চিঠিটা পোষ্ট করার ব্যবস্থা করেছি। আর হ্যাঁ, তোমার বন্ধু আমার শেষ সময়ে দয়া করে একটা এম্বুলেন্স ডেকেছে।

জানি না চিঠিটা পাবে কি না। তোমার কি এখনও একটুকরো মেঘের জন্য হাহাকার করে?

ইতি
......."

অনেক হাহাকার জমেছে আমার বুক পকেটে। এত হাহাকার নিয়ে মানুষ বাঁচে কি করে?

কেউ কেউ শুধু বেঁচে থাকার জন্য নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দেয়;
কেউ কেউ শুধু ভালোবাসার জন্য একটা নাক ফুল কিনে রাখে;

অনেক খুজেঁ খুজেঁ আমি একটা নাক ফুল কিনেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে।  নীল রঙের 'এয়ার মেইল' লেখা খামও পেয়েছিলাম। সেই খামে নাকফুল ঢুকিয়ে পোষ্ট করেছি ঠিকানা বিহীন।
কেউ কেউ শুধু বেঁচে থাকে আরেকটি চিঠি'র অপেক্ষায়!


#গদ্যকবিতা