তোমার এলোমেলো খোলা চুল কতদিন ছুঁয়ে যেত
আমার কাঁধ, মুখমন্ডল, বিলাতো বেলি'র সুবাস
এতোটাই কাছে আসতে যে হৃদকম্পনও শুনতে পেতাম
আমি কাঁপতাম, কেঁপে উঠতাম, বৈপরীত্য রসায়নে।


ভোরের শুভ্রতায় বিলাসী বাগানে তোমার পরিচর্যায়
ফুলেদের ঘুম ভাঙত, সখ হত ওদরে বিলিয়ে দিতে
তোমার মাঝে, শিউলি ফুলের আত্মাহুতিতে কষ্ট পেতে প্রতিদিন ।
আমাদের দু’জনের কলেজ ছিল বেশ কাছাকাছি,
টিফিনে বান্ধবীদের দলছুটে ভাগ দিতে টিফিনের
মনে হত অধিকারে রাখি তোমায়, শুধুই তোমাকে
ছুটি শেষে পড়ন্ত বিকালে বাড়ী ফেরায় ছিলে নিত্য সঙ্গী
বাড়ির কাছাকাছি এসে দূরত্ব বাড়িয়ে বলতে-
কাল কিন্তু শিউলি ফুল এনো, খোঁপায় পরে ছুবো তোমায়,
বলতাম— যে ফুল রাতেই মানায়, ভোরে ঝরে, কি দাম তার?
বকুল ফুল নাও, শুকিয়ে গেলেও সৌরভ ছড়ায় দীর্ঘকাল।
বলতে — যা বলেছি তাই করো, শিউলি ফুল কুড়ানো হয় না
প্রতিদিনই একটি ছেলে আমার আগেই ফুল কুড়াতো
ছেলেটি হয়তো তার ভালবাসার কাছে আবদ্ধ ছিল
আমার ফুল কুড়ানো হয় না, আমি ভালোবাসা প্রকাশে
নিরূদ্ধ, অপ্রকাশিত অনুভূতিতে।


বছর কত যে পেরুলো ইয়াত্তা নেই
শরৎ যায় তো ফাগুন আসে উকিঁ মারে বসন্ত মনে
চিঠি এল রঙিন খামে, প্রতিটি অক্ষর বড্ড চেনা
চাইলেই যে তোমার হতাম, বলনি একটিবারও
শিউলি ফুল কুড়ানো ছেলেটি তোমার আগেই যে পৌঁছাত
আর তুমি! নিয়েছ ঘ্রাণ, স্পর্শ কিন্তু বলনি ‘ভালোবাসি”
নিমন্তনে এসো, দিও বিদায় ঝরে পড়া এই শিউলিকে।


আমার আর মন চাইনি কারো ঘরের দরজা ডিঙতে
দেখা হলো একদিন আলো ঝলমল শপিংমলে
জানতাম কাছে আসবে, ক্ষোভ ঝাড়বে, কিন্তু না -
হেসে বললে — বোকা কোথাকার, পুরোনো বইও পোকায় কাটে,
মিছেমিছি নষ্ট করলে সময়, এখনো একা?
বলেছি-চাঁদ না থাকলে কি জোছনা বিলোয়
স্বভাব সুলভ হেসে বললে-আধুনিক দেবদাস হতে চাও বুঝি?
খিলি পান খেয়ে পার্বতীর হাত ধরার অপেক্ষায় কি বয়স আশি করবে?
বলি-করতে দোষ কি? স্পর্শ শুধু প্রেমিকরাই বোঝে
হেসে বললে— দোয়া কর। মেয়ের বিয়ের পর আবার হয়তো,
তোমার উঠোনে শিউলি ফুলে ঝরবো, কুড়াবে তো?
হেসে বলি-আসবে তো? বকুল ফুলে মানাবে কিন্তু বেশ।