ভেবেছিলাম ফিরে যাব-
বাবুই পাখির কারুকার্যময় বাসা বোনা শেষ হয়নি
আসন্ন শীতে, মায়ের হাতে সোয়েটার বোনা -
চলছে নিপুণ দক্ষতায়, লাল-নীল রঙের মিশ্রন,
বাবুই পাখি আর মা মোহমায়ায় জড়ানো ভালবাসা-
-বসুধা ছাড়তে মন চায়নি।
ভেবেছিলাম ফিরে যাব-
পুকুরটা কেবল কেটেছি, শান বাঁধানো ঘাট হবে
মাছ ছাড়বো, পরিযায়ী পাখির আগমনে কিচিরমিচির,
মেঠো পথ পুকুর ঘেষেঁ চলে গেছে বহুদূর অজানায়
মাটির সোঁদা গন্ধে দুরন্ত নেশার টান, মায়া অতি
-বসুধা ছাড়তে মন চায়নি।
ভেবেছিলাম ফিরে যাব-
কাজল রেখায় তোমার চোখ, ফুলের চাষ করায়-
আরেকটি সৃষ্টি দেখার নেশা, ফুল-রেণু কিংবা গন্ধের-
অপেক্ষা, শাড়িতে পুকুর ঘাটে তোমার রহস্যময়তা-
গল্প শুনবো, নুপূর নাকি অশ্ব গতির কেউ আমাকে-
‘বাবা’ বলে প্রথম ডেকে উঠবে, আমি শিহরিত কল্পনায়
-বসুধা ছাড়তে মন চায়নি।
ভেবেছিলাম ফিরে যাব-
সমুদ্রের তীর আছড়ে পড়া নোনা জলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েঁ,
নগ্ন পায়ে সূর্যাস্তের লাল আভায় ঢেউয়ের পর ঢেউ দেখে
দৌড়ে পালিয়েছি, ধরতে পারেনি নীল সমুদ্রের সফেদ ফেনা,
নিতে পারেনি ঢেউয়ের ভেলায় অনেক দূর ভাসিয়ে নিরুদ্দেশে
আগমীতে আরেকটি সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের রঙ দেখবো বলে-
-বসুধা ছাড়তে মন চায়নি।
ভেবেছিলাম স্বর্গে যাবো-
গুরুজি বলেছিল রূপান্তরহীন দেহে স্বর্গ অধরাই রয়
দেহের রূপান্তার চাইনি, নশ্বর দেহেই ইচ্ছা স্বর্গ ভ্রমণের।
কিতাবে বর্ণিত আয়তলোচন অপ্সরীরা, প্রবহমান নহর
সিংহাসনের তলদেশ বয়ে যাওয়া ঝর্ণা ধারা, নেশাহীন পানীয়
কিশোর বালকেরা রবে সেবায় অনন্ত সময়, আমার নেশা হয়
-দেহ রূপান্তরহীনে যাওয়া হয়নি।
ভেবেছিলাম রূপান্তরিত হবো-
বকুল তলায় ভরা জোছনা, মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করা রাত্রি
এমন জোছনা দেখিনি কভু এই দুনিয়ায়, এত মায়াময়-
ভুবন, জোছনায় দেহটা বিলিয়ে দেই মেঠো জমিনে, নি:শব্দে
নিথর কাব্যিক জগত রূপান্তরের ডাক দিয়েছিল কানে কানে
-রূপান্তরিত দেহ মিলায় জোছনায়।।