কালান্তর অভিশপ্ত মানুষের ভোর দেখার ভাগ্য
হয় না বলেই হয়তো পৃথিবীর ভোর এত অপরূপা স্নিগ্ধা, তুমুল তুলতুলে মায়াবিনী! রাতজাগা মানুষেরা সকালের শান্তিময় ঘুমের জন্যে পরিশ্রুত প্রশান্তির স্নিগ্ধ ভোরকে হারায়! গণ ঘুমন্ত মানুষ ভোরকে পায় না বলে গণহারে সজাগ পাখিরা ভোরকে প্রিয় আপন করে সাজায়!

ভোর সে-তো পাখিদের গেয়ে বেড়ানো দিনের প্রথম সাংস্কৃতিক মঞ্চ! ভোর মোলায়েম সুরের পাখিদের
কবিতা-গানের অপার পরিপাটি অডিটোরিয়াম!
গান, কবিতা শেষে সরষে ক্ষেতে হলুদ ফুলের
চিকচিক হাসিতে পাখিরা মনভোলানো নৃত্য করে।
ভোরের পাখিরা হয়ে উঠে মুক্ত আকাশের মতো
বাঁধাহীন, স্বাধীন, নিরাপদ!

সার্বভৌম পাখিদের বসবাসঅযোগ্যতার চরম
অভিশাপ নিয়ে হয়তো ভোরের মহৎ মানুষের দল
চার দেয়ালে বন্দি হয়ে ঢের ঘুমোয়! আপসোস আমিও তাই! তাই তো ভোরের পাখিরা নির্বিঘ্নে ডানা মেলে আনন্দে উল্লাসে আকাশে উড়ে। চিরলপাতার ডালে বসে প্রভাতের কোমল জয়ধ্বনি করে। পাখিরা রূপসী প্রজাপতির কাছে গিয়ে ফুলের মেহমান হয়; ফড়িংবাবু এসে ফসলের মাঠে সকালের নাশতা দেয়!

হয়তো কেবল মানুষ বসবাস না করলে পৃথিবীর সমস্ত দিন-রাত নিশীথ ভোরের মতো সুনির্মল, সুন্দর, আর সুখকর হতো! পৃথিবী আর পাখি হয়ে উঠতো সখে-সখা রীতি। গাছপালা তার পাতাগুলোকে মনানন্দে ফুলের কাছে গিয়ে বিয়ে দিতো! নিরাপদ পাখির বাসরে ফুল থাকতো! দুর্বাঘাসের মেঠোপথে শান্ত পাখিরা বসে নির্বিঘ্নে শিশিরস্নান করতো!

মানুষ মূলত পৃথিবীতে এসে প্রথম দেড়যুগ হেসেখেলে কাটানোর পর একদিন দেখে সে বড্ড বড় হয়ে গেছে! প্রকৃত সুখের মোহর ফেলে এসে আমৃত্যু নিজস্ব দুঃখ বয়ে বেড়ায়! হাসতে গিয়ে চাপাকান্না লুকোয়, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আহত যাতনার জ্বালা কুড়োয়! স্নিগ্ধ পরিবেশ দূষিত হয়! বিপদসংকুল পৃথিবী উত্তাপের গালিচা বিছিয়ে ধোঁয়াশার হিড়িক লাগিয়ে দেয়! শৈশব কৈশোর মূলত মানুষের জীবনের এমন-ই স্নিগ্ধ একটা ভোর! তারপর জীবনে বড় হতে গিয়ে মানুষ মূলত ভেতর ভেতর বড় দুঃখ হয়ে যায়!

পড়ন্ত কৈশোর ফেলে এলে মানুষ স্বার্থপরের মতো দুঃখটাকেই আগলে নিয়ে একান্তে বয়ে যায়! শৈশব রেখে এসে মানুষ বড্ড ভুল করে গভীর মহাসাগরে ঝাপ দিয়ে ডুবে মারা যায়, যেতে হয়! এরপর থেকে মানুষের জীবন হয়ে উঠে নির্মম বাস্তবতার জলজ্যান্ত দুপুর, ঘুঙুট ব্যস্ততার
কত হাজার ক্লান্ত বিকেল আর সারাদিন সংগ্রাম করা প্রতিকূল হিসেবনিকেশের পর নিঃসঙ্গ একের পর এক দুঃস্মৃতিময় রাত; একের পর এক দুঃস্বপ্নের বড়সড় অন্ধকার রাত!