চেয়েছিলাম অতলান্ত সমুদ্রতীরে আমার একটা জীবন থাকবে একদমই আলাদা, একা-একাগ্রতাহীন সুললিত পাখির গানের মতো চঞ্চলিত। সমুদ্রের সুনিবিড় জলের উপর কাঁচা রোদের হিম রুপোলি খোলসের মতো টলটলে তাজা দুঃখহীন দূরন্ত! ভেবেছিলাম ধীর আনন্দমগ্ন শরীর নিয়ে শৈশবের শিশুখেলার মতো করে দুঃখ-ভয়হীনতা থেকে নিঃসৃত মধুরচঞ্চলতার মধ্যদুপুরে দাঁড়িয়ে থাকবো সমুদ্রের ঔদ্ধত্য উদারতা আর সুবিশালতার সামনে— বিপরীতে দুঃখগুলোই সেই অনাবিল সমুদ্রের মতো উদারমগ্ন উৎফুল্লতায় ভেতর ভেতর অবিশ্বাস্য বড় হয়ে জেঁকে বসলো! অনিরুদ্ধ ফেনিল জলরাশির মতো মস্তিষ্কে ধীর অবগাহিত হলো হাহাকারমেশানো সমস্ত ধূসরিত দুঃখ! নিঃসীম-নিকষ এই সমুদ্রের উপর দিয়ে তারপর তো গগনবিদারী কত দুঃখাহত নদীবক, নদীচিল, বুনো পায়রারা উড়ে গেলো জন্মজন্মান্তর, তার কোনো গৎবাঁধা হিসেব নেই!

চেয়েছিলাম ঘন-নিবিষ্ট এক নিগূঢ় অরণ্যে একটা জীবন থাকবে ধু-ধু সবুজ প্রসারিত! সঞ্জীবিত শিশুর মতো বিস্ময়ঘোর লীলাস্মিত আনন্দোচ্ছ্বাসে তরতর ছুটে বেড়াবো নিরুদ্দেশী বুনো প্রজাপতি হয়ে! ফুল-পাতাশোভিত ছায়াঘন বৃক্ষ থেকে উৎসারিত সবুজস্নাত তাজা হিমগন্ধে চির-উদ্বেলিত হবো! অরণ্যময় চিরপ্রোজ্জ্বল শাপলা ঝিলের মায়াময় জলমগ্ন জলময়ূরের মতো বিস্ময়াভিভূত বিমুগ্ধচিত্তে আদিগন্ত ঘাসের জমিন দেখবো —বিপরীতে দুঃখগুলো নিজেই হিমপ্রশান্ত বুকের ভেতর খোলা ঘাসের মতো বেশ সরোবর ক্ষিপ্র হয়ে গেলো! আদিগন্তবিসারী খোলা জমিনের মতো দুঃখগুলো হৃদয়াশ্লেষে গুপ্তবেশে রহস্যময় বিস্তৃত জমিন হয়েই বড় হলো!