ক্লেদাক্ত পৃথিবীর কুটিল যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে
আমি অপেক্ষায় থাকি আবার ফিরে যাবো শৈশবে
বাবা ফিরবেন রাত করে নতুন জামা-জুতো নিয়ে
কাল ভোরে ঈদের খুশীতে পরবো বলে।
আমি অপেক্ষায় থাকি শৈশবের দস্যিপনার, আর
বাবার শাসনের ভয়ে মায়ের আঁচলে মুখ লুকাবার।
আমি প্রতীক্ষার প্রহর গুনি, কিশোর বেলায় ফিরে
নতুন ক্লাসের বইগুলি নেড়েচেড়ে গন্ধ নেবো বলে।
আমি অপেক্ষায় থাকি
কৈশোরের দুরন্ত বেলার
আইসক্রিম কিনে চার জনে মিলে
ভাগাভাগি করে খেয়ে নেয়ার দিনগুলো ফিরে পাওয়ার।
আমি অপেক্ষার প্রহর গুনি, যাবো ফের
সবুজ মাঠ আর খোলা আকাশের নিচে
ঝিরঝির হাওয়ায় যেথা কাশবন দোলে
যেথায় পাখিরা উড়ে মুক্তির ডানা মেলে।
আমি অপেক্ষায় থাকি হেমন্তের আগমনের
পাকা ধানের সোঁদা গন্ধে মাতাল হবো বলে।
আমি প্রতীক্ষায় থাকি শীতের সকালের
পৌষের পিঠা খেয়ে নাড়ার আগুনে হাত পোয়াবো বলে।
আমি অপেক্ষা করে আছি চৈত্রের কাঠফাটা রৌদ্রের
হাঁটুজল পুকুরে নেমে কাদাপানিতে মাছ ধরবো বলে।
আমি অপেক্ষা করে থাকি জ্যৈষ্ঠের দুপুরের
গাছ থেকে থোকা থোকা পাকা আম পেড়ে খাব বলে।
আমি প্রতীক্ষায় থাকি, আবার ফিরি ছেলেবেলায়
কোনো একদিন কানামাছি খেলার ছলে
ছুঁয়ে দেবো স্বপ্নঘোরে মায়াময় চোখ দুটি তাঁর
গোলাপী মুখ তাঁর আরক্তিম হবে লজ্জায়।
আমি অপেক্ষা করে থাকি
আবার কোন একদিন আসুক সেদিন ফিরে
যেদিন প্রথম নববধূ অবগুণ্ঠন ফেলে
মোর পানে ফিরে সলজ্জ হেসে কুটিকুটি হয়েছিল।
পৃথিবীর সব সৌন্দর্য দেখা শেষ হলে পরে
আমি অপেক্ষায় থাকি সেই ক্ষণের
যখন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে যাবো অন্তিম শয়ানে
অনেকদিন পরে, আমি ঘুমাবো আকণ্ঠ শান্তির ঘুম
তারপর, স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাবো তরতর করে
অনন্ত সুন্দরের পানে।
(১লা জানুয়ারি ২০২০)