বাড়ি তাহার তিস্তার পাড়ে নামটা ভাদুই মিয়া
ভালই ছিল এত জনম বউ মালাকে নিয়া
যদিও তাদের ছিলনা কোন সন্তান-সন্ত্বতি
তারপরও ভাল মতই কাটত দিবা রাতি
মাঠে ছিল নিজের জমি গোহালে ছিল গরু
দুই চার জন মানুষ নিয়া লাগাত জমিতে বুরো
সেই ফসলই পাকত যখন পৌষের শেষ দিকে
ফসল দেখে ভাদুই মিয়ার কষ্ট যেত ঢেকে
আবার ক’জন মানুষ নিয়া আনত কেটে ধান
সোনার ধানে ভরে উঠত মালা বিবির উঠান
গোলায় তোলে সোনার ফসল তবেই ফেলত শ্বাস
গোলার ধানের ঘরের চালে খাইত বার মাস।।
এমনি ভাবে কেটে গেল তার জীবনের ষাট বছর
হঠাৎ একদিন শুরু হল সেথা অনেক বড় ঝড়
বউটা তাহার মরিয়া গেল অজানা রোগেতে
অনেক চেষ্টা করেও ভাদুই পারলনা বাঁচাতে
ডাক্তার বল, কবিরাজ বল, সবার কাছে গেল
কেহই আর বুঝিলনা রোগটা কি তার ছিল
তবুও ভাদুই চেষ্টা করেছে জীবনের সব দিয়ে
স্ত্রী যদি তার না ই বাঁচে কি হবে ওসব দিয়ে
গরু বেচল, জমি বেচল, বেচল গোলার ধান
তাতেও যদি বাঁচানো যায় মালা বিবির প্রাণ
হায়, মরণ যারে ডাক দেয় তারে কি বাচান যায়
নারে ভাই তা থেকে বাচানোর নাই কোন উপায়।।
বউও গেল সম্পদও গেল রইল ভাদুই একা
বাঁচলেও শেষে অনেক বছর পাইনি সুখের দেখা
ঘরনী নাই যেই ঘরেতে সেথাই কি মন টিকে
তাইতো ভাদুই ঘর ছাড়িল দুঃখ নিয়ে বুকে
শুরু হল নতুন জীবন নীল আসমানের তলে
জমিনটাকে বেছে নিয়ে শীতল পাটি বলে
প্রথমে ক’দিন কাটাল তারে মালা বিবির স্মৃতি
হিসেব কসত কত দূর তার দুঃখের বিস্তৃতি
পাইনি ভাদুই কূল কিনারা সারা দিন রাত ভেবে
এরই ফাকে চলে গেল তার বিশটি বছর উবে।।
এই আশি বছর বয়সে ভাদুই পথে পথে ঘুরে
পেলে খায় আর না পেলে রয় শূণ্য উদরে
এমনিভাবে একের পর এক কাটছিল তার দিন
হঠাৎ সেথা দেখা দিল মঙ্গা এক কঠিন
অভাব শুধু তাহার নহে অভাব সবার ঘরে
পাইনি কিছু তিন গেরামে সারাটি দিন ঘুরে
তারপরও সে পানি খেয়ে কাটাল একটি রাত
দ্বিতীয় দিনও ঘুরে কোথাও পায়নি রুটি ভাত
দুই দিনেরই উপবাসে দুর্বল তার গা
নড়ছেনা আর হস্ত দুটি বাড়ছেনা আর পা
অনেক কষ্টে গেল সে এক বটবৃক্ষের তলে
ক্ষুধার জ্বালায় বুকটা তখন যাচ্ছিল তার জ্বলে
উপর দিকে দৃষ্টি যেতেই মন গেল তার ভরে
এক কাক পক্ষী রুটি নিয়ে বসল এসে উড়ে
বুদ্ধি খোঁজে ভাদুই তখন কিভাবে খাবে রুটি
কষ্ট করে আনল কিছু টুকরো টুকরো মাটি
হঠাৎ যখন কাকের পানে ঢিল মারিল ছুড়ে
রুটিটা তার পড়ল নিচে কাকটা গেল উড়ে
লম্ফ দিয়ে রুটির গায়ে রাখল যখন হাত
মরণ দেবতা তখনই তারে করে দিল কাত
পারলনা সে মুখে দিতে কেড়ে আনা রুটি
তারই আগে ভাদুই মিয়ার হয়ে গেল ছুটি।।
**********
দুঃখ আমার এথায় নহে দুঃখ অন্য জ’গায়
স্বাধীন দেশে একটা মানুষ মরল ক্ষুধার জ্বালায়
কত লোকে বিলাসিতায় পোলাও মাংস গেলে
সেথায় ভাদুই’র অনাহারে প্রাণটা গেল চলে।।