আগামীর বিবেকের কাছে
কৃতঘ্নতার দায় মুক্তি
    কলমে : আব্দুল্লাহ আল সাদি

এই কাঠ ফাটা রোদে
ছেলেটি রাস্তায় চলছে,
বুকের ভিতর তৃষ্ণা
যদিও কুড়ি টাকা দিয়ে এক বোতল পানি কিনে
কিছুক্ষণ আগেই পিপাসার্ত বুকে,
পানির তৃষ্ণা মেটালো।

তবুও তৃষ্ণা
এতো তৃষ্ণা কিসের?
গ্রাম থেকে নগরে চাকরির খোঁজে এসেছে
সেই আকুলতায় তৃষ্ণা,
বোনের দেওয়া জমানো হাজার দেরএক টাকা    মানিব্যগসহ হাড়িয়ে যাওয়ার সন্দিহান কী
বুকের ভেতর  তৃষ্ণা জাগায়?
মায়ের সাথে যোগাযোগমাধ্যম ভাঙ্গাচোরা
মোবাইলটা ছিনতাই কারীর
কাছে খুয়া যাওয়ার ভয় কী তৃষ্ণা জাগায়?

বুঁজে উঠতে পারছে না কিসের তৃষ্ণা!
গ্রামের সরল ছেলেটা এই প্রথম
শহরে এসেছে,
এই তপ্ত রোদে ক্লান্তি নিয়ে হাঁটার মাজেও
যেন হাজার থেকে লক্ষ মানুষের নাকের ছিদ্র দিয়ে
নির্গমন করা কার্বন ডাই-অক্সাইড এর প্রতিক্রিয়ার এক অস্থিরতায় গ্রামে ফিরে যাওয়ার তৃষ্ণা।

ছেলেটির মনে প্রশ্ন জাগলো
আমার সাথে দেনাপাওনা আদানপ্রদান করা
বন্ধুরা কোথায়?  
আমার নিঃসরণকৃত কার্বন - ডাই - অক্সাইড
গ্রহণের বিনিময়ে নিরন্তর অম্লজান দিয়ে
যাওয়া তরূগুলো কোথায়?

ছেলেটি অবসাদের চোখে তাকিয়ে দেখে
চকচকে পিচের রাস্তায় আর
ওভারব্রিজের উপর দিয়ে চলছে দামি গাড়ি
রাস্তার পাশে ফুটপাত দিয়ে ক্ষিপ্রবেগে হাঁটছে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পথচারী।

এই তাপদাহে ছেলেটি
আচমকা মনের ইশারায় গাছের সন্ধান করছে
ছেলেটি চাচ্ছে আম গাছের দেখা পেতে
ছেলেটি খুজছে কাঠাল, তেতুল, পেয়ারা,
আতা গাছের দর্শন,
বটবৃক্ষের সন্ধান নিতান্ত স্থগিত রেখেছে
কারন সে বুজে গেছে এই শহরে বট বৃক্ষ দীপ্ত শাখা মেলতে পারবে না!
কারণ চারদিকে যে ইট পাথরের দেয়ালের বাঁধা।

সে অন্বেষণ করছে সেগুন, জাম গাছ
নিমগাছের স্নিগ্ধ মাতাল হাওয়া
কিন্তু কোথাও সমুচিত গাছ নেই!
এই শহরে খুঁজে নিলে হয়তো সরকারি
কোনো সংরক্ষিত স্থানে কয়েকটা গাছের দেখা
মিলতেও পারে।

হঠাৎ চোখে পড়লো সিমেন্টের দালানে দুতলার
বারান্দায় একটি গোলাপ ফুলের চারা
ছেলেটির মন বিস্মিত চোখে
খানিকটা পুলকিত হয়ে উঠলো
একটি গাছের দেখা পেয়ে,
গাছটি হয়তো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া  ছাত্রীর শখ কিংবা বিমোহিত ভালোবাসায় স্বযত্নে বারান্দায় স্থান পেয়েছে,
যদিও গাছটি ছোট তবুও
ছেলেটির কাছে নগন্য নয়
কারন বৃক্ষশূন্য শহরে দেনা পাওনার অংশিদার হিসাবে পেয়েছে গাছের দেখা ।

এই শহরে চাকরি প্রার্থি হিসাবে বার বার
  প্রত্যাখ্যাত হওয়া
ছেলেটা আজ কারো সপ্নের শহর
কারো কাছে আজব-
এই শহরটাকে
গত দিনের চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে
ভিন্ন দৃষ্টিতে প্রদক্ষিণ করছে।

ছেলেটি দেখছে-
চর্তুদিকে কলকারখানা,
ধনীদের টাকায় গড়ে তুলা
ভাড়ায় খাটানো সুউচ্চ দালান,
শিল্প প্রতিষ্ঠান,
দেখছে বিলাসবহুল হোটেল,পরিচ্ছন্ন ভোজনশালা,
মানুষের অতি প্রয়োজনীয় হাসপাতাল
আর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়
দেখছে সদরঘাটের অত্যাচারিত বুড়িগঙ্গার জলও!

ছেলেটি দেখছে-
রাস্তার পাশে ফুটপাতে শুয়ে থাকা অঙ্গহারনো পঙ্গুত্ব বরণকারী ভিক্ষুক,
গলায় টা-ই ঝোলানো ক্লান্ত ভদ্র লোকটিকে টেনে নেওয়া গা থেকে গাম বেয়ে পড়া রিকশাচালককে,
কিন্তু কোনো কিছুই ছেলেটির মনকে
ভাবাতে পারছে না  
বৃক্ষহীন শহরে এসে এক অনিবার্য ভাবনার পোকা ছেলেটির মাথায় ডুকে গেছে।

সে বৃক্ষ রোপণ করতে চায় পরিবার,
গ্রামের কচিকাঁচা শিশু,
আগামীর জন্যে কিংবা পাখি, কাঠবিড়ালির জন্যে,
অক্সিজেনের ভারসাম্যহীনতায়
ছেলেটি চায় তার আয় থেকে খরিদ করে যথাসম্ভব
প্রত্যেক মাসে
অসহায় পাঁচটি পরিবারকে একটি করে গাছের  চারা উপহার দিতে।

ছেলেটি বুজে গেছে শহর বাঁচাতে হলে,
দেশমাতৃকা বাঁচাতে হলে,
পৃথিবীর সুন্দর সুস্থ প্রতিবেশ বাঁচাতে হলে
  গ্রামে নগরায়নের ছোঁয়া চাওয়া
বোধহীন অভিলাষী মানুষদের বৃক্ষ শূন্য করার
সংক্রমণ থেকে মুক্ত করতে হবে।

ছেলেটি শুনছে অদৃশ্য কেউ বিলাপ করে
আহ্বান করছে আগামীর কাছে তোমরা কলঙ্কের
দায়মুক্ত থাকতে চাইলে গ্রাম বাঁচাতে হবে
নির্বিচারে হত্যা হওয়া  
বৃক্ষদের  বাঁচাতে হবে..,
ছেলেটি দেরি না করে গ্রামে
ফেরার জন্যে উঠে পড়লো গাড়িতে।

    গাড়িটি শহর ছেড়ে দূরে আসতেই
রাস্তার পাশ ঘেঁষে ধ্বংসাবশেষ
দাড়িয়ে থাকা শালবন
বৃক্ষের লতাপাতা আর পাখিরা চিৎকার করে বলছে
স্বস্তির নিশ্বাস নিতে চাইলে
আগামীর কাছে কৃতঘ্নতার দায় মুক্ত থাকতে চাইলে
বৃক্ষ রোপণ করো।

ছেলেটির মনে অজান্তেই বেজে উঠছে-
আগামীর বিবেকের কাছে
কৃতঘ্নতার দায় থেকে মুক্তি পেতে হলে
কৃষি আর কৃষককে ভালোবেসে
আলিঙ্গন করতে হবে,
মাটির নিঃস্বার্থ ভালোবাসা নিতে হবে
পানির অশোভন অপচয় রোধ করতে হবে
ছেলেটি আজ
মৃতপ্রায় শহর,গ্রাম,দেশমাতৃকা,
ধরিত্রীকে সুস্থ প্রতিবেশ দিতে
করছে দৃঢ় অঙ্গিকার।

১৬-৫-২৪