রাত্রিরা দেয় পাড়ি প্রাঙ্গণে জাগে ভোর,
উঠে পড় ওগো মেয়ে ফুরিয়েছে রাত তোর।
বেসুরো সময় ডাকে চৌরাস্তার মোড়ে,
জলের লাইনে তোর নিয়তিরা ঘর করে।
চটপট গৃহকাজ আকাশের বেলা বয়,
দুঃস্থ গেরস্থালী তোর পানে চেয়ে রয়।
সুখের অন্বেষণে পণ্য যে হয় শ্রম,
তামসিক জীবনে মমত্ব বড় কম।
অবিরাম প্রত্যুষ এঁটো বাসনের ভিড়ে,
অন্ধকারের মার জটিল ভাগ্য ঘিরে।
কিবা দিন কিবা রাত দুঃসহ জঞ্জাল,
শাসনের বিশ্বে স্বপ্নের কঙ্কাল।
বৈশাখ জৈষ্ঠ আমোদের নেই ভিড়,
তালি দেওয়া চটিতে মন্দ বরাত স্থির।
মনিবের হেঁসেলে কত সাদা ফোটে ভাত,
কালিপরা ভাগ্যে যুঝে যায় দুটো হাত।
ভাতের বাসনাতে রাত জাগে দুই চোখ,
ঘুরপাক খায় শত বুভুক্ষু নীল শোক।
সংসার নয় এ তো যুদ্ধ শিবির খুব,
দিনগত পাপক্ষয় তবু বেঁচে থাকা সুখ।
শ্রাবণের ধারাজল বৈশাখী খর রোদ,
বাক্যের জ্বালা আছে,আছে অজ্ঞান বোধ।
বৎসর ঘুরে যায় নিয়মের শাসনে,
দীর্ঘ আয়ুটি ক্ষয় ঐ এঁটো বাসনে।
লক্ষ্মী মেয়েটি তুই রাঙা হাসি সই তোর,
কষ্ট গোপন করে ভীষণ মনের জোর।
ভাগ্যের চাকা যদি বিপরীতে ঘুরে যায়,
রুক্ষ সমাজ যেন হাড়ে হাড়ে টের পায়।
সদিচ্ছা এই যে লেখাপড়া শেখবার,
আকাশ লক্ষ্য করে ওড়াবে নিশান তার।
উদাসীন সংসারে তোরও কি নেই সাধ
স্বপ্ন দেখার মতো একটু সময় থাক?
একই তো দেহ মন,সূর্য দেখার চোখ
অভ্যাস ছুটোছুটি বিশ্রামী হয় হোক।
বুকের কোটরে যত ইচ্ছের হৈ চৈ,
ঈষৎ মমত্ব দিয়ে আলোকিত করবই।
প্রত্যয় সম্বল পাথুরে ভীষণ পথে,
জীবন সওয়ারী হবে তোর সাফল্য রথে।
ভাগ্যের তল্লাশ বাসনের ভিড়ে নয়,
জেদী অপেক্ষার দেখবো সূর্যোদয়।
এরকমই হোক না রাতমোছা প্রিয় ভোর,
বহু-প্রতীক্ষীত দ্যুতির সকাল তোর।
ঘাম-জল ঝরানো বিশ্রী অনার্দ্র দিন,
বর্ণের আগুনে পরিশোধ হবে ঋণ।
চির প্রতীক্ষার বৃষ্টির আড়ালে
প্রত্যাশী সূর্য যেন হাত বাড়ালে।
দ্বার খোলে শুভদিন সুদীর্ঘ আয়ুতে
আনন্দ মন্থন স্নায়ু হতে স্নায়ুতে।