কালি-ঝুলি মাখা মরচের দেহগন্ধে বিবশ এক নিবে যাওয়া লন্ঠনের মন পড়ার চেষ্টা করি।
পাশে গিয়ে বসলাম।
তার সুখের দিন মেঘ হয়ে পাড়ি দিয়েছে হাওয়ার মুখে কবেই।
আজ আবার সবকিছু স্মরণে আনার চেষ্টায় আলাপ জমাই।
সোহাগী গলায়,সন্ধ্যার প্রায়ান্ধকারে তার অন্তরে প্রবেশ করে জানতে চাইলাম সেই তপ্ত যৌবনের কথা।
বললে,”সে যে আমার তরল মুক্তার দিন গো!!শান্ত ঘাসের পরে স্মরণীয় শিশিরকণা!!ভোলা কি যায়!!
অন্ধকারের সকল কালিমা ধুয়ে দেওয়ার গুণাবলী আমাকে করে তুলতো অতিশয় সুন্দরী।
যুগের পর যুগের রাত্রির হিসেব আছে আমার মানসে।দরমার ঘর হোক চাই দালান,যার উঠোনেই সন্ধ্যা নেমেছে প্রকাশ্যে এসেছি সন্ধ্যাতারার মতো।
সপ্রতিভ দিনগুলো কোমল হয়ে ঝুলে আছে মনতরুর এ ডালে সে ডালে।
ছোট আকাঙ্খা গঞ্জের অনন্ত আনন্দেরা করতো প্রদক্ষিণ দৈনন্দিন জীবনে।
দেখেছি কিষাণকে ধরণীর বুকে নিত্য নব রূপ দিতে।আমার সাথেই তো পৃথিবীর উঠোনে বসে সে ভাগ করে নিয়েছে তার সুখ..সায়াহ্নের মুগ্ধ সভাতে।
ছুঁয়ে আছে প্রান্তিক মায়া,ছুঁয়ে আছে বাঁধানো রাস্তা শহরের ক্লান্ত নিঃশ্বাস।
সবই দেখা খুব কাছ থেকে।
এই ক্লান্ত অবশ চোখ দেখেছে কবির পদ্যলেখা জ্যোৎস্নায় অমাবস্যাতে।তার গর্বিত পথসঙ্গী...তার লোভনীয় চোখের সাথী এই আমি।
এসব আমার অপূর্ব অনুভুতির সম্পদ!! দিনগুলি সোনা দিয়ে মোড়া,ভিতরে দোলে খুব।
অনুভবে ঘিরে থাকা মন, হারানো নিমেষ খোঁজে আন্দোলিত জলে স্থলে,নীলে সবুজে!!
হীরকের মতো শুচিস্মিত দিনগুলি এখন বয়সের ভারে স্তিমিত।
হাঁটলাম বহু বহু ক্ষণব্যাপী।অবশেষে রাজত্বের পতনকাল
রইলো না উত্তরপুরুষ ও তার উত্তরাধিকার
না থাকুক,তবুও বেঁচে আছি চিত্রশিল্পীর তুলিতে,অচেনা অজানা কবির অখ্যাত লেখনীতে।
জড়িয়ে জড়িয়ে স্মৃতির লতাপাতা,পড়ে আছি একা পুরোনো লন্ঠন হয়ে অন্ধকারের আস্তানায়!!”