সেই সময়ের কথা মনে হয়
যখন জীবনের নাম ছিল- জীবনানন্দ।

যখন আমাদের পাড়ায় কোনো
জেল-ফোন ছিল না।

ছিল না ছেলেদের মাথা বাড়িয়ে
স্টাইলিশ হওয়ার চাপ।

অথবা গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষায়
লিপ্ত থাকার সুখ-অভিনয়ের।

মেয়েরা হয়তো তখনও শিখে নি,
কীভাবে নিজের শিল্পসংখ্যক
রেপ্লিকেশন করতে হয়
চেহারা বিবেচনায়।  

অথবা যখন গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষক
কল্যাণীর মাথায় 'সেলিব্রেটি' শব্দটা
আমদানি হয় নি।

মেয়েদের সম্পর্কে কম জানা
ছেলেদের সংখ্যা ছিল বেশি।
তাই কি খেলায় বা ধুলায়,
মাখামাখির আপত্তি ছিল না বেশ।

ছিল না পোজের চল, অথবা
মাথায় এক্সট্রা প্রেশার-
নিজের নামে বিজ্ঞাপন ছাপানোর।

যখন হাসির এতগুলা প্রতিশব্দ
বা ছদ্মনাম ছিল না।

যখন আমাদের গলার আওয়াজ
শুনতে অসুবিধে ছিল না
প্রকৃতির।

তাই,  উঠোন-ঘাটে হাসি বা বিলাপ
বারণ হলেও,

আমরা বিশ্বাস রাখতাম সবুজ মায়ের
কোলকে।

তাই, ছুটতে গিয়ে ব্যাথা পেলেও
ভয় ছিল না সেই মাকে।

যত বড় হলাম,
ভয় পেতে শিখলাম
প্রকৃতির ছায়াকে।

তাই নিরাপদ দুরত্ব শ্রেয়-
আমার প্রকৃতি
থেকে প্রকৃতির।

আবার কখনো লোডশেডিংয়ের সন্ধ্যায়
যখন, আড্ডার পর্যাপ্ত  সময় ছিল।
আমার দিদির অথবা লাগা বাসার
পর দিদির!

তাই হয়তো পর্যাপ্ত সময় ছিল
একটু গিট ছেড়ে হাসার।

পর্যাপ্ত সময় ছিল,  
চোখের তারার সাথে
ওবাড়ির - তারা মিলার।

পর্যাপ্ত সময় ছিল
ঠাট্টা-মশকরার।  
অথবা তাফালিং উত্তেজনার।

এসবেরও যে পরীক্ষা আছে -
সেটা তখনকার দিদি জানতো না।
তাই হয়তো তার বড় গোল ফ্রেমের
চশমাটাও লাগতো না।

সহজ ছিল বলেই
সে আনন্দ আজ অনেক দামী।

আমার বিগত দিদি কি জানে?
এত দাম হয়না আজকাল
ট্রিট-রেস্তোরার ঝলসানো
লাল পাস্তার?
অথবা নীলদুনিয়ার ছাপানো
রঙিন সব ছবির?

ও হ্যা, দামের কথা মনে হলেই
টাকার কথা চলে আসে।

টাকাটাই দাম - নাকি দামটাই টাকা?
সে প্রশ্ন অহেতুক।

তবে একটা প্রশ্ন আমি রাখতেই
পারি আমার সেদিনকার দিদিকে।  
-দিদি! তোর চুলের শ্যাম্পুর গন্ধটা
ঠিক কত টাকা দিয়ে কেনা যায়?

বল দেখি? - কত টাকা হতে পারে
তোর গানের গলার সুরটা?

আমি বিশ্বাস করি,
আমার সেই দিদি
আজকাল টিকটক, লাইকি
বা স্টারমেকারের পর্দায় দাড়াতেই
পারে না!
দাড়ানো মাত্রই মরে যাবে
আমার শ্যাম্পু-গানের দিদিটা

আর মৃত মানুষের গলায়
আবার গান!

হ্যা, ওরা সবাই মরে গেছে
আমার দিদি,  
দিদির ভাইটা,
দিদির মা,  
মায়ের ছেলেটা?
...
কত হিসেব করবো!
নিজেই গুনে নিন,  
ঠিক কয়জন দিদি
মারা গেলো বা যাবে?
- সাথে সহজ আনন্দটাও!


শুনতে পাচ্ছেন না?
প্রকৃতি,

কাকে বাঁচানোর জন্য  
মৃত মানুষগুলোকে মারছে?

হিসেবটা জটিল হলেও
গড়মিল হবে না নিশ্চিত।  

প্রকৃতি যে গড়মিল পছন্দ করে না।
আর রাজত্বের প্রশ্ন নাই বা তুললাম,  

যে মানুষ নিজেকে রাজা দাবি করছে,  
কার দয়ায় সে রাজা?
সে ভুলে গেছে,
কারা? তার অন্ন-জল-বিহার যোগায়?  

সাগর থেকে সবুজ,
একবার মুখ ফিরিয়ে নিক,
রুঢ় মানব বুঝে যাবে,  
তার আশ্র‍য়।


যে সময়ের কথা মনে হয়,
সে সময়ে 'হিংসে হয়?' রকমের
বিজ্ঞাপন জীবন না থাকলেও,
তাতে জীবনের স্বভাব ছিলো
ছিলো - জীবনানন্দ।