পরিচিত সমস্ত ছিদ্রে আমি কান পেতেছিলাম,
পাথরের সমস্ত ফাটলে ফাটলে যেমন
হাওয়া লাগলে সুন্দর গোঙানি ওঠে,
তেমনি আমার আত্মার শিলাময় জঙ্ঘায় গহ্বরে
আমি ছিলাম উৎকর্ণ—প্রহরী।
শব্দের রণিত উপত্যকায়
আমি প্রত্যহ যে স্তোত্রে মোনাজাত করতাম
ঈশ্বর ঈশ্বর বলে,
সেই ধ্বনিপুঞ্জ দোজখের আওয়াজের মতো
খাঁখাঁ রবে বিদীর্ণ হয়েছে।
বহুবার উচ্চারিত কর্কশ চীৎকারের মতো
মনে হয় আমার, কথা।
নিরুত্তাপ গানের মতো, ধ্বনি।
নিষ্প্রভ শোকের মতো আমার, শব্দ।
নির্জন কষ্টের মতো, বাক্য। আর
কীটদষ্ট গ্রন্থের মতো আমার তনুতীর্থ,
আমার প্রাণপীঠ।
আমাকে দুঃখের চেয়ে নতুন কোনো দাহ কেউ
দিতে পারেনি।
আমাকে শোকের চেয়ে সত্য কেউ
বোঝাতে পারলো না। আর
কষ্টের চেয়ে কঠোর স্পর্শ কোনদিন
ছোঁবে না আমাকে।
হে মোহান্ত, তেমন কোনো শব্দ জানো কি
যার উচ্চারণকে মন্ত্র বলা যায়?
হে মোয়াজ্জিন, তোমার আহ্বানকে
কী করে আজান বলো, যা এতো নির্দিষ্ট।
আর হে নাস্তিক
তোমার উচ্চকণ্ঠ উল্লাসকে কোন্ শর্তে আনন্দ বলো,
যা এতো দ্বিধান্বিত।
তাই আমি নাস্তিক নই।
বিশ্বাসী নই।
সতর্ক আত্মার ওপর কড়ির মতন
দুটি চোখ অনুভবের যাদু দিয়ে
পাশাপাশি সাজিয়ে রেখেছি।
নিসর্গের ফাঁকে ফাঁকে যখন বিষণ্ণ হাওয়ার রোদন
দঃখের নিঃশ্বাস ফেলে, আমি সেই
ধ্বনির যাদুকর।
চিতল হরিণী তার দ্রুতগামী ক্লান্তির শেষ যামে
যখন প্রস্রবণে পিপাসায় মুখে নামায়,
আমি সেই জলপানশব্দের
শিকারী।