ভাসমান নূহ নবীর জাহাজ। ঈশ্বরের অলৌকিক আক্রোশ মহাপ্লাবনরুপে সমস্ত পৃথিবীকে চিহ্নহীন করে ফেলেছে। চারদিকে শুধু এক থৈ থৈ জলের রাজ্য। মাঝে মাঝে দেখা যায় জলের ওপর ইতস্তত ছড়ানো মানব-মানবীর বিকৃত মৃতদেহগুলো। শুধু এই জাহাজটিতেই প্রাণের সাড়া। ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ঢেউগুলো জাহাজের গায়ে অবিশ্রান্তভাবে ভেঙে পড়ছে। দীর্ঘদিন ভাসমান অবস্থায় থাকার পর আজ হঠাৎ কয়েকজন পুণ্যবান পুরুষ ও নারী সমভিব্যহারে নূহ একটি কপোত হাতে হাঁটু গেড়ে পাটাতনের ওপর বসলেন। তারপর প্রার্থনার ভঙ্গিতে পাখিটি আকাশের দিকে তুলে ধরলেন।

নূহ।। তখন কেমন হবে, আবার যখন
       তরল তিমির ছিঁড়ে আসবে এ পৃথিবী প্রথম?
       জলপাই পাতার ফাঁকে সেই আলো,
       বালি আর ঘাসের নরম
       উদ্ভাসিত হবে ফের পুণ্যবান পুরুষের চোখে
       তখন কেমন হবে আমাদের রমণীরা সব?
       যখন আবার
       শোনা যাবে ঘন্টাধ্বনি উটের গলায়
       তখন কেমন হবে প্রভু
       হনোকের অবাধ্য এ পৃথিবী পাতকী?
       আকাঙ্ক্ষার মতো সিক্ত মোহময় মাটিতে কি আমি
        রাখবো প্রথম পা? অথবা যে প্রশংসার বাণী
        আমরা ধারণ করি হৃদয়ের কোমল কৌটোয়
        তার কোনো কলি
        উচ্চারিত হবে এই অধমের নত মুখ থেকে?
        আদমের কালোত্তীর্ণ সেই পাপ যেন
        হে প্রভু আবার কভু ছদ্মবেশী সাপের মতন
        গোপন পিচ্ছিল পথে বেরিয়ে না আসে।

কপোতটি নূহের হাত থেকে ঝটপট শব্দ করে আকাশের দিকে উড়ে গেল। নূহের পাশ থেকে একজন পুণ্যবতী রমণী কথা কয়ে উঠলেন।

নারী।। ভেসে ভেসে তারপর একদিন দুরন্ত বাতাসে
         যখন আবার পাবো পুরানো সে মাটির সুরভি
         আনন্দে উল্লাসে আমি আমার সে পুরুষের হাতে
         আঘাত ভোলানো চুমু এঁকে দেবো নীরব আবেগে।
         প্রথম রাত্রিতে তার বীর্যবান সন্তানের বীজ
         সযত্নে ধারণ করে আমি হবো ক্লান্ত ফলবতী।
         আবার করাবো পান বুকের এ উৎস ধারা হতে
         জারিত অমৃত রস। এতোদিন যৌবনের নামে
         যা ছিলো সঞ্চিত এই সঞ্চারিত শরীরে কোষে।
         হে নূহ সন্তান দেবো, আপনাকে পুত্র দেবো আমি।
            
         নূহের পেছন থেকে একজন পুণ্যবান পুরুষ কথা বললেন।

পুরুষ।। পৃথিবীর চিহ্ন নিয়ে যদি ফেরে আশার কপোত
          গভীর আদরে আমি তুলে নেবো ফসলের বীজ,
          আল্লার আক্রোশ থেকে যা এনেছি বাঁচিয়ে যতনে
           আবার বুনবো তা-ই পুণ্যসিক্ত নতুন মাটিতে।
           তোমাকে জড়াবো বুকে হে প্রেয়সী, তোমাকে কেবল
           রক্তের উত্তাপ দেবো, গৃহ দেবো তৃপ্তি দেবো নারী
           আপনাকে শান্তি দেবো আর নূহ, শক্তি দেবো আমি।