বেড়ালের পায়ের সতর্কতা নিয়ে লোকটা গোলার্ধ থেকে গোলার্ধে
ঘুরে ফিরে সংবাদপত্রের ছবি হয়ে থাকে । টাইম ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠা থেকে
টেলিভিশনের পর্দায় নেমে ভালুকের মতো কাঁপে । ঘুমোয় না । কে জানে
কতবার অজু ছাড়াই নামাজ পড়ে নিতে হয় তাকে । সে জানে ফোয়ারার
পানির কাছে যাবার আগেই তাকে দশবার পৃথিবীটা ঘুরে আসতে
হবে । আর কথা বলতে হবে এমন রাজরাজড়াদের সাথে
যাদের প্রত্যেকের সিংহাসনের পায়ার নিচে ইতিহাসের দীর্ঘশ্বাস বিস্ফোরক
বারুদের সুপোরি হয়ে গুটি বেঁধে আছে ।
লোকটা তার পোশাকে লক্ষ শিশুর কান্না, মানুষের গোঙানি আর
ক্রমাগত গুলির শব্দ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় কায়রোর সবচেয়ে
সতর্ক দৃষ্টি রাস্তাগুলো পেরিয়ে
সিরিয়ার বাজারে তাকে ফালতু তাড়াহুড়ো করতে দেখি ।
কিন্তু জর্দানের ভূমি স্পর্শ না করা পর্যন্ত বিমানবালারা তাকে
ঝিমোতে দেয় । একটা লেবাননী মেয়ে বোরখা সরিয়ে
তার সীটবেল্ট বেঁধে দিয়ে ফিরে এসে কাঁদে । সে জানতেও
পারে না । মাঝে মাঝে মাথা তুললে মনে হয় আরবী রুমালে ঢাকা
আল আকসার গম্বুজ থেকে মানুষের গোমরানির মতো এখুনি কোনো
আওয়াজ বেরিয়ে পড়বে । সে তার দিকে তাকানো প্রত্যেকটা
মানুষকেই হাসি ফিরিয়ে দিতে ওস্তাদ । কিন্তু ইহুদীরা
বলে তার হাসিগুলোর পাহারায় আছে এক লক্ষ অদৃশ্য
নল উঁচানো আল ফাতাহ । যাদের মা তাদের মরুশিবিরের
দীর্ঘ কষ্টের রাতগুলোতে গর্ভে ধারণ করেছিলেন । আর
মুখে একটা মাত্র শব্দ উচ্চারণ শিখিয়েই তাদের হাত ধরিয়ে
দেয়া হয়েছে রাইফেল : 'বিজয়' ।
একবার তার সাথে দেখা হয়েছিল মীনায় । লক্ষ লক্ষ তাঁবুর পাশে
এক সেমিনার হলে অকস্মাৎ সে উদয় হলো । তার চোখে মুখে হাসিতে
বেড়ালের পায়ের নিঃশব্দ নির্ভীকতা । পাকিস্তানের
প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের পাশের
চেয়ারটায় বসে সে তার বিচিত্র গোঁফের প্রশংসা করে হাসলো ।
আর বক্তৃতা করতে উঠে দাঁড়িয়েই বললো, এই পার্বত্য উপত্যকার
প্রতিটি পাহাড়চূড়ো ও পবিত্র স্তম্ভগুলোর শপথ, শপথ
পবিত্র কাবা তাওয়াফকারী এখানে উপস্থিত প্রতিটি
নর-নারীর । যদি দলবদ্ধভাবে একবার, শুধু একবার । এমনকি
নিরস্ত্রভাবেও একবার । যদি
আমার দেশ প্যালেস্টাইন । শত্রু অধিকৃত একটি শহর । আপনাদের
প্রথম কেবলা । একবার যদি ভাইগণ ।
আল কুদসের দিকে মুখ ফেরান, একবার ।
হাতে হাত । এহরামের শ্বেতবস্ত্র সেলাইবিহীন । একবার । শুধু
হাঁটতে হাঁটতেও চলে যান । তবে
সামনেই জেরুসালেম, আমার প্রিয়নগরী,
বিজয় ।
(কাব্যগ্রন্থ : একচক্ষু হরিণ । প্রথম প্রকাশ : ১৯৮৯।)