কে জানে ফিরলো কেননা, তাকে দেখে কিষাণেরা অবাক সবাই
তাড়াতাড়ি নিড়ানির স্তুপাকার জঞ্জাল সরিয়ে
শস্যের শিল্পীরা এসে আলের ওপরে কড়া তামাক সাজালে।
একগাদা বিচালি বিছিয়ে দিতে দিতে
কে যেনো ডাকলো তাকে ; সস্নেহে বললো, বসে যাও,
লজ্জার কি আছে বাপু, তুমি তো গাঁয়েরই ছেলে বটে,
আমাদেরই লোক তুমি । তোমার বাপের
মারফতির টান শুনে বাতাস বেহুঁশ হয়ে যেতো ।
পুরনো সে কথা উঠলে এখনও দহলিজে
সমস্ত গাঁয়ের লোক নরম নীরব হয়ে শোনে ।
সোনালি খড়ের স্তুপে বসতে গিয়ে-- প্রত্যাগত পুরুষ সে-জন
কী মুস্কিল দেখলো যে নগরের নিভাঁজ পোশাক
খামচে ধরেছে হাঁটু । উরতের পেশী থেকে সোজা
অতদূর কোমর অবধি
সম্পূর্ণ যুবক যেনো বন্দী হয়ে আছে এক নির্মম সেলাইয়ে ।
যা কিনা এখন তাকে স্বজনের সাহচর্য, আর
দেশের মাটির বুকে, অনায়াসে
বসতেই দেবে না।
তোমাকে বসতে হবে এখানেই,
এই ঠাণ্ডা ধানের বাতাসে ।
আদরে এগিয়ে দেওয়া হুঁকোটাতে সুখটান মেরে
তাদের জানাতে হবে কুহলি পাখির পিছু পিছু
কতদূর গিয়েছিলে পার হয়ে পানের বরোজ !
এখন কোথায় পাখি ? একাকী তুমিই সারাদিন
বিহঙ্গ বিহঙ্গ বলে অবিকল পাখির মতোন
চঞ্চুর সবুজ লতা রাজপথে হারিয়ে এসেছো ।
অথচ পাওনি কিছু, না ছায়া না পল্লবের ঘ্রাণ
কেবল দেখেছো শুধু কোকিলের ছদ্মবেশে সেজে
পাতার প্রতীক আঁকা কাইয়ুমের প্রচ্ছদের নীচে
নোংরা পালক ফেলে পৌর-ভাগাড়ে ওড়ে নগর শকুন।
(কাব্যগ্রন্থ : সোনালি কাবিন । প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ১৯৭৩ ।)