ফাঁদ পেতে বসে আছে পাখি-ওলা ।
তোতা, ময়না,টিয়ে,দোয়েল,শালিক,
মাছরাঙ্গা, পিঙে,বৌকথাকও বিদেশি
লিনিওলেটেড, ম্যাকাউ, হলুদ টিয়া,
গ্রে-প্যারট, ল্যামবার্ড, রেড রাম,
কাকাতুয়া, ডাইমন্ড ডু,পিনথ, ককাটেল,
রোজিলা, গোল্ডিয়ান পিচ্চে, পোরপাচ,
গোর্কী গালা কাকাতুয়া, লাভবার্ডস ,
ফরফাস ,বাজরিগার পেলে সোনায়
সোহাগা ।পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বিক্রি
করবে । গেরস্তর দের বারান্দার কোনে
খাঁচায় ঝুলবে পাখি । কারবা দাঁড়ে পায়ে
চেন বাঁধা অবস্থায় পাখি গাইবে কৃষ্ণ
নাম । গৃহস্বামীর সুখ গান গাইতে না
পারলে দানাপানি বন্ধ করে দেবে ।
সহবত শেখাতে কোন কোন পাখিকে
ছাতার কাপড়ে ঢেকে রাখা হবে ;
লোক চক্ষুর অন্তরালে ।

পাখিরা ভাবে; পাখি-ওলা কী নিষ্ঠুর ।
নিজের জন্য একটা পাখিও রাখার
সাধ হয়না তার ।
-পাখি-ওলা বলে সাধত হয় ; তবে
সাধ্যে কুলয় কই । এই দেখ ম্যাকাউ
তুমি কত শিক্ষিত তবুও তোমার দাঁড়
চাই । দাঁড়েতে দাঁড়িয়ে থেকে প্রেম হয় ।
তার জন্য একটা আকাশ দরকার ।
যার খাঁচার মত কোন জালের দরজা
নেই । নেই তোমার পায়ের বেড়ির
মত বন্ধন ।

পাখিরা বলে ;
-তবে তুমি আমাদের ধর কেন?
পাখি-ওলা হাসে !
-তোমরা ধরা দাও বলেই না;
আমি ধরতে পারি ।
পাখিরা বিরক্ত হয় !
-আমাদের তুমি ঠকাও ফাঁদ পেতে ।
পাখি-ওলার হাসি থাকে অম্লান ;
-এই দেখ চোরের জন্য দ্বার খুলে
রাখলে ; চোর যদি চুরি করে । দোষটা
কার চোরের না মনিবের । তোমরা
তো আমার ফাঁদে জেনে শুনে আকৃষ্ট
হও সখি ।

পাখিরা বলে ;
- হবোনা তোমার ঐ তেলা পোকার মত
লকলকে শিশ্ন দৃঢ় হলে পরে ; ময়ূরেরা
ভাবে সাপ । তোমার ঐ দীর্ঘ বক্ষ যুগল ;
যেন স্বর্গের নন্দনকানন । চোখ দুটো যেন
শেষনাগের অমৃত হ্রদ । ঠোঁট দুটো যেন
সমুদ্রর ফেনা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে শুধু চুমু
খাবার জন্য । বটবৃক্ষের মত তোমার এক মাথা
চুল যেন শান্তির নীড় । নাকখানা যেন পায়রার
বোমা । দূর দূরান্ত থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে চিনে নেওয়া
যায় তোমাকে ।

তার পর বহু দিন কাল হাওয়ার মত উবে যায়
পাখি ওলা ঘুণাক্ষরেও টের পায় না । বুঝতে পারে
যখন ; তখন তার ঢেঁকির মুখের মত শিশ্নটা
নিম্নমুখী । দারিদ্র আর বয়সের চাপে তার প্রসারিত
বক্ষ যুগলের হাড়ে এখন পাখির খাঁচার মত ক্ষুদার্থ
মানুষের ভাস্কর্য । চোখ দুটো যেন ছানি পড়ে ঘোলা
নালার জল । ঠোঁট দুটো যেন উচ্ছিষ্টের ভাগার ।
মথার কেশবিন্যাস আজ মরূদ্যান হয়ে ; যেন
বসন্ত শেষের পাতা ঝরা গাছ । পাখিদের
আকৃষ্ট করার মত পাখি-ওলার আজ আর কিছু
নেই । ফাঁদ পেতে সে বসে থাকে । কোন পাখি
আর আসেনা তার কাছে । ফাঁদের দড়িতে পড়ে
না টান ।

হটাৎ একদিন ভর দুপুরের ঝিমুনির ফাঁকে পাখি-ওলা
দেখে ;সাক্ষাত যমের মত একটা কালো কুচকুচে
দাঁড়কাক এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে । পৃথিবীর
কোন দেশে কে পোশে এই অলুক্ষনে পাখি ।
পাখি-ওলা জানেনা । আমস্টারডামে নাকি
পতিতাদেরও সামাজিক স্বীকৃতি আছে ; তবু কেন
সমাজের নোংরা খেকো ঝাড়ুদার কাকেরা অস্বীকৃতি
এদেশে ; তা জানে না পাখির দালাল এই পাখি-ওলা
আর পতিতা কাকেরা । তলায় তলায় কাকের
উপকার উপভোগ করলেও ; বাড়ির চৌহদ্দিতে
কাক দেখলে ; অমঙ্গলের কথা ভেবে গৃহস্বামী
তাড়ায় ছে ছে করে ! পাখি-ওলাও বলে ;
-হুস যা ।
দাঁড়কাক বলে ;
-আমার নামের আগে দাঁড় থাকলেও
আমি কাকাতুয়ার মত দাঁড়ে থাকি না ।
আমাকে ধরো তোমার ফাঁদে ।

পাখি-ওলা রেগে ওঠে ।
-বেড় দূর হ । তোকে ধরে লাভ নেই । ছুঁলেই
এইডস হতে পারে ।

কাক বলে;
-পাখিরা বলে তুমি নাকি পোষার মত পাখিই
পাওনি আজ অবধি । যে পাখি বেঁধে নয় ছেঁড়ে
পোষা যায় । আমাকে তুমি তোমার গৃহিণী করবে
পাখি-ওলা । আমি খাঁচা বা দাঁড় ছাড়াই তোমার পোশ
মানব ।

পাখি-ওলা আর রেগে তিরস্কার করে ;
-দূর হ ঘাটের মরা ; যমের ও অরুচি !

পোড়ার মুখি কাক তখনো বলে;
- আমি তোমার ওপরের হারিয়ে যাওয়া
ক্ষণিকের রাংতার
আড়ালের চকলেটের মত হৃদপিণ্ডটার
ভালবাসায় অকৃষ্ট হতে চাইছি পাখি-ওলা ।
ওটা যেন অন্নপূর্ণার হাড়ি কখনো ফুরবে না ।

এবার পাখি-ওলা একটু নরম হয় ; খিদেটা
তার চনচনে পেয়েছে বেস । ভাবে যেচে আসা
সুযোগ হাত ছাড়া করা কী ঠিক হবে !!
একবারও ভাবে না এই প্রথম কোন পাখি পাখি-ওলার
বাইরে আবহ বিকারে জীর্ণ শরীর মন্দিরের ফাঁদের নয়;
ভেতরের দেব দর্শনের কদর করছে ।

ফাঁদের দড়িতে পড়ে টান ।
কাক বলে ;
-আমি ধন্য পাখি-ওলা চির কৃতজ্ঞ তোমার কাছে ।
পাখি-ওলা কাকের ঘার মটকাবার আগে বলে;
-এবার তুই মরবি ।
কাক বলে ;
-মরেও সুখ ;ভালবাসায় বঞ্চিত হয়ে বাঁচার চাইতে ।

শহরের আস্তে-কুড়ে মানুষের নোংরা আবর্জনা সাফ
করতে করতে কাকটা বোধয় বিষাক্ত কিছু পুষছিল
নিজের পাকস্থলীতে । সেই রাতেই ভেদ বমিতে
পাখি-ওলা মারা গেল কাকের মাংস খেয়ে ।

সকাল হতে না হতে রাজ্যের চিল আর শকুন
ছুটে এলো পাখি-ওলার মৃতদেহে আকৃষ্ট হয়ে ।
খুবলিয়ে খুবলিয়ে খেল তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ !
বাদ পড়-লোনা পাঁজরের আড়ালের হৃদপিণ্ডটাও ।

পৃথিবীতে পাখি-ওলার সেই ফাঁদ পড়ে আছে এখনো ।
তুমি পাখি-ওলা হলে কী পাখি ধরবে বলও ?

---------------------------------