বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে
আস্তে আস্তে ভুলে যেন শিশুকালের ক্ষুদ্র গণ্ডির ভেতর চলে যাচ্ছি
ভুলে যাচ্ছি আমি বড় হচ্ছি , বয়স কমে ছোট হচ্ছি দিনদিন।
ছোটবেলায় আমি হাফপ্যান্ট পরতাম, আরও ছোটবেলায় ল্যাংটা হয়ে ঘুরতাম,
ছোটবেলায় আমি সারাদিন ঘুরতাম সমস্ত পথঘাট, বাগান, নদী, মসজিদ মন্দির সবজায়গায়
বিরামহীন চলতাম, মনে হতো পুরো এলাকা আমার হাতের মুঠোয়,
মন চাইলে আমি চলে যেতাম এমাথায়, আবার মুহূর্তের মধ্যে ওমাথায় চলে আসতাম
কতশত পথ হাঁটতাম কিন্তু এখন সব পথ এ যাই না, আমার স্মৃতিশক্তি কমে গেছে
আমি চাইলেও  সবজায়গায় জেতে পারিনা আর কারন আমর বয়স কমছে।

আগে শাপলা তুলতে যেতাম, সেই শাপলা দিয়ে মালা বানাতাম
শালুক পোড়াই খেতাম, নতুন আলু তুলে পোড়াই উৎসব করে খেতাম
এখন এসব করি না, আমার বয়স বাড়ছে আর আমি ছোট হচ্ছি।
ছোটবেলায় আমরা গাদন, বুড়ির চু, চোরপুলিশ, বাতাবি লেবু দিয়ে ফুটবল খেলতাম
কাদা ছড়াছড়ি, বৃষ্টিতে ভিজতাম, পকুর এ ঘণ্টার পর ঘণ্টা গোসল করে এসে
মায়ের হাতে কাঁচা কুঞ্চীর বাড়ি খেয়ে চোখের সাথে পাছাও লাল করতাম
পানিতে জমে থাকা সর আমাদের গোঁফ এ জমে যেতো
গোঁফ উঠেছে বলে আমরা সবাই হাসাহাসি করতাম।

বর্ষাকালে যখন চারিদিকে খালবিল নদিনালা ভরে যেতো
আমরা ছিপ নিয়ে মাছ ধরতাম, নদিতে যেতাম জাল নিয়ে
এখন আর এসব করি না, কারন আমার বয়স বাড়ছে আরা আমি ছোট হয়ে যাচ্ছি।

ঝড়ের রাতে আম কুঁড়াতে যেতাম তিন ব্যাটারির লাইট নিয়ে
লাইট এর ঘোল ঠিক করতে করতে অন্যরা আম পেয়ে যেতো।

এখনো ঝড় আসে, হয়তো মানুষ আমও কুড়াই কিন্তু এ ভিন্নরকম ঝড়
এ ঝড় নামে আরও অন্ধকার রাতে, কিছু মানুষের মনে কালো ছায়া নেমে আসে
তার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় তাদের মুখে, যেন হুনোমানের রূপ নিয়েছে
এ ঝড় তাদের ভেতরে বয়ে নাড়িভুঁড়ি সব ওলটপালট করে দেয়
তাদের মনুষ্যত্ব লোপ পেয়ে হিংস্র জন্তুর মতো হয়ে গেছে অথচ তারা ধার্মিক!
তারা স্বাভাবিক চলার পথে কাঁটা দিয়েছে কারণ ঝড়ে তাদের বিবেক বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে!
ভুলে যাচ্ছি তাদেরকে আমি চিনতাম, কারণ আমি বড় হচ্ছি আর আমার স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে
আমার বয়স বাড়ছে আর আমি ছোট হয়ে যাচ্ছি
ছোটবেলার অনেক স্মৃতির মতো বর্তমানের অনেক ঘটনাও ভুলে যাচ্ছি ।
আমি অনেক কিছু ভুলে যেতে চাই, ভুলে থাকতে চাই, অনেক কিছু বুঝতে চাই না,
আমার বয়স যেদিন একদিন হবে, বয়স তো আর শূন্য হতে পারে না
সেদিন আমার আর কোনো স্মৃতি থাকবে না!