শৈশবের পুরাতন ব্রহ্মপুত্রকে যখন উন্নয়নের পালে হাওয়া দিতে গিয়ে মরে যেতে দেখি;
নদীর জলকে দেখি অজল, অসাড়, অপ্রাণ- এখানে ওখানে;
ড্যান্ডি-খ্যাত শীতলক্ষ্যাকে দেখি ধুঁকরে পথ চলতে;
শহরের অলিগলির খালগুলোকে দেখি বক্সকালভার্টে রূপান্তরিত হতে;
কখনো কখনো পদ্মা-মেঘনা-যমুনাকে দেখি যৌবনের ইতি টানার ইঙ্গিত দিতে;
কবেবার “তিতাস একটি নদীর নাম” হারিয়ে গেল সাগরদাঁড়ির সাথে;
তখন দানিউব কেমন করে কুলুকুলু সুরে কথা কয়; জানতে ইচ্ছা করে।
দানিউব কেমন করে পথিকের চোখকে তার বুকে নিবব্দ করে;
ভাসিয়ে নিয়ে যায় ভিয়েনা-প্রাগ অথবা ভেনিসে; প্রমোদভ্রমণে!
কেমন করে দানিউব নিজ বুকে দ্বীপ এঁকে দেয়;
নির্মান করে পথিকের প্রান্থশালা- মার্গারেট আইল্যান্ড;
দানিউবকে সালাম জানাতে ইচ্ছে করে।
জনশ্রুতি আছে, এক ছিল বাংলার জীবনানন্দ;
ছিল তার রূপসার ঘোলা জল।
সেখানে সাদাছেড়া পালে কিশোর খেলা করত;
“বাংলার সবুজ করুণ ডাঙ্গায়”।
এক ছিল “পদ্মা-মেঘনা-যমুনা তোমার আমার ঠিকানা” শ্লোগান।
এক ছিল আনন্দ বেদনা মিলন বিরহে নদীমাতৃক বাংলাদেশ।
দানিউবের তীরে এসে বাংলার দিকে মুখে ফিরে দাঁড়ালে-
চোখে ভাসে বঙ্গোপসাগরের তটরেখা।
বদ্বীপ বাংলাদেশকে কাছে পাই দানিউবের জলে কান পেতে।
মিলিয়ে দেখি, এই দানিউব আমাকে দিয়েছে শৈশবের নদীর ঘ্রাণ;
দিয়েছে নদীমাতৃক বঙ্গের চিত্ররূপ।
যে নদী বুকে ভরে দেয় জল-সুরের সানাই,
সেই দানিউবের কাছে কৃতজ্ঞতার সীমা নাই।