গালিভারের দেশে হঠাৎ তাহারা খুব অস্থির হইয়া উঠিল। তাহারা এমন মোটাসোটা হইয়া পড়িয়াছিল যে রাস্তাঘাটে চলাচল করিতে ধাক্কাধাক্কি করিত। কে কাহাকে অতিক্রম করিবে সেই প্রতিযোগিতায় রাস্তাঘাটে সর্বদা যানজট লাগাইয়া রাখিত, শেষে কেহই আগাইতে পারিতনা। এক শ্রেনীর মাতাল গালিভার বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাইতে গিয়া কখন অন্যদের চাপা দিয়া মারিত, আবার কখনও নিজেরাও মরিত। কোনো নিয়মশৃঙ্খলার বালাই নাই। যেমন খুশি তেমন চলিতেছিল।
গালিভারদের দেশেই লিলিপুটরা তাহাদের নিজেদের এলাকায় কোনো রকম দিন পার করিতেছিল। তবে মাঝে মধ্যে তাহাদের এলাকাতেও গালিভারেরা ভজঘট বাধাইত। ইহার ভিতরে একদিন দুই গালিভার তাহাদের বৃদ্ধ যানবাহন নিয়া বেপরোয়া গতিতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়- আশেপাশে কে আছে কি নাই, তাহার ভ্রুক্ষেপও করেনা। একসময় স্কুল ফেরত কিছু লিলিপুটের উপর দিয়া গাড়ি চালাইয়া দেয়। ঘটনাস্থলেই কয়েক লিলিপুট মারা যায়। লিলিপুটরা বিক্ষুব্ধ হইয়া ওঠে- এই হত্যার বিচার দাবী করে, আর যেনো এমন না ঘটে সেইরূপ ব্যবস্খার দাবী করে। কিন্তু বরাবরের মত গালিভাররা কোনো পাত্তা দেয় না। কোনো সমাধান না পাইয়া অবশেষে লিলিপুটরা ছোট বড় সকল রাস্তায় নামিয়া পড়ে। একদিনের ভিতরে লিলিপুটবাহিনী সকল রাস্তাঘাটের কন্ট্রোল গ্রহন করে।
গালিভাররা হঠাৎ তাহাদের রাস্তাঘাটে নতুন কিছুর উপস্থিতি লক্ষ করে। আগের মত চলা ফেরা করিতে গিয়া স্থানে স্থানে লিলিপুট বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পাড়ে। ইতোমধ্যে লিলিপুটেরা রাস্তাঘাট পরিস্কার করিয়া ফেলিল। তাহারা-
#গালিভারদের গাড়িঘোড়ার লাইসেন্স পরীক্ষা করিতে লাগিল। ইহাতে ছোট বড় প্রায় সকল গালিভার অনিয়মের দায়ে ধরা পড়িতে লাগিল।
#গালিভারদের উজির, নাজির, কোটাল, চৌকিদার, কাজী, নফর প্রায় সকল শ্রেণী আইন ভাঙার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত ছিল। লিলিপুটদের হাতে তাহাদের করুণ অবস্থা দেখিয়া সকলে হাসাহাসি করিতে লাগিল।
#লিলিপুটরা যানবাহনের গতি এবং সাইজ অনুপাতে একেকটি লাইনে চালানোর ব্যবস্থা করিল। ফলে রাস্তাঘাটের জট উধাও হইয়া গেলো। চাঁদাবাজির দুর্নীতি নাই হইয়া গেলো।
#পদ-চালিত ছোট মামাদের যাতায়াতের জন্য আলাদা লাইন করায় তাহারা বেজায় খুশি।
#এম্বুলেন্স, পুলিশ, জরুরী সার্ভিসের জন্য এই প্রথম বারের মত আলাদা লাইন দেখিয়া গোটা দেশবাসী চমকাইয়া গেলো।
#সারা দিন খাওয়া দাওয়া ছাড়াই বিনা বেতন ভাতায় লিলিপুটরা নানা সার্ভিস দিতে লাগিল। ইহার মধ্যে বৃষ্টির ভিতরেও ট্রাফিক ডিউটি হইতে শুরু করিয়া দরকার মত দৌড়াইয়া বা গাড়ি চালাইয়া গালিভারদের পার করিয়াও দিতো।
সপ্তাহব্যাপি ক্ষমতা হারাইয়া কিছু গালিভারের বিষয়টি ভালো লাগিতে ছিলনা। তাহারা মারপিট করিয়া লিলিপুটদের সরাইয়া দিতে লাগিল। একসপ্তাহের শাসন শেষ করিয়া লিলিপুটরা তাহদের নিজ এলাকায় ফিরিয়া যায় বটে, কিন্তু রাখিয়া যায় অসম্ভব এক সুখস্মৃতি- স্বপ্নের শাসন! এরপর থেকে গালিভাররা বার বার স্মরণ করিতে থাকে লিলিপুটদের শিক্ষা- কেমন করিয়া ঐরূপ চমৎকার ব্যবস্খা তাহারা কায়েম করিয়াছিল!
গালিভারদের রাজনীতি, ভোটাভুটি এবং রাজত্ব নিয়া বড় ধরনের ক্যাচাল চলিতেছিল। দীর্ঘনের ঐ মস্তবড় সমস্যা সমাধানের জন্য লিলিপুটদের ডাক পড়িল। সেই গল্প আরেকদিন~~