গভীর রাত- অনেকক্ষণ ধরে হাটছি
আমি এদিকে কেনো- কোথায় যাচ্ছি
কথা ছিল যাব বাড়ির দিকে
অচিন যায়গায় আমায় নিয়ে এলো তবে কে?
ফোন করে কারেও কাছে একটু শুনে নিই
এই যাহ, মোবাইল ফোনে একটুও চার্জ নেই
আচ্ছা, ক’টা বাজে, কয় তারিখ কি বার আজ?
কিছুই যে এখন আর মনে পড়ছে না,
ঘড়ি নেই- বহুকাল ওটা পড়া হয় না
সেলফোনে ভর করে জীবন চললে যা হয়..
তাহলে এখন উপায়?
সামনে হাটছি- আধো ছায়ায় ওটা কি শেড নাকি
যদি মেলে কোনো খোঁজ খবর, যাই দেখি
সপ সপ শব্দে কেউ কি পেছনে সরে গেলো
বেঞ্চির ওপরে কয়েকটা বাক্সে কিছু খাবার খোলা,
তবে কি কারো খাওয়ার সময়ে চলে এলাম
এটা কি বাসস্টান্ড নাকি কেউ নিচ্ছিল বিশ্রাম,
নেই কোনো সাইনবোর্ড বা নির্দেশিকা
বাসস্টপ হলে বাসের সময়সূচি থাকার কথা
মনে পড়ল অমাবশ্যার রাতে শ্রীকান্তের ভূত দর্শন
হায় শরৎবাবু.......কোথায় এলেম- এ যে মহাশ্মশান!
উভয় দিকে বিস্তৃর্ণ প্রান্তর
মহাসড়ক করেছে একে এফোড় ওফোঁড়
মধ্যরাতে জনমানব শূন্য রাস্তা-
নেই কোনো গাড়ি ঘোড়া কিংবা কারও ব্যস্ততা
ওপরে দু’এটা নিশাচর পাখি দ্রুত ধায়
এত শশব্যস্ত যে পিছে কেউ ধাওয়া করছে বোধ হয়
তখনও মেলেনি দেখা লক্ষ নরমুন্ড
গেন্ডুয়া খেলোয়াড় কিংবা প্রেতাত্মার নৃত্য প্রচন্ড
তবে কানের কাছে কিছুটা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে
শ্রীকান্তের দশা কথা মনে হতেই একটু ভয় ভয়ও করছে
অসহায় লাগছে- কাউকে কিছু বলার সুযোগ নেই
ঘাড় মটকালেও জানতে পারবে না কেউ।
আবার শুরু হাটা- কি আর করা
চারিদিকে মাথা উঁচু হরেক রকম এপিটাফ খাড়া
বড় ছোট সাদা কালো ছাই ধোয়ার রং নানা কারুকাজ
আছে নাম পরিচয় কিংবা শ্লোক- সব মিলিয়ে ভুতুরে সাজ
একি সামনে এরা কারা- সমাধিলিপির লেখাতে পাই
আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল, ডিসেম্বর দশ আঠার’শ ছিয়ানব্বই
রবার্ট ক্লাইভ, নভেম্বর বাইশ সতের’শ চুহাত্তর
তারিখ বিহিন হের হিটলার।
কে যেনো বললেন..... এসে ভালোই করেছ তুমি
আমরাও গল্প করার লোক খুঁজছি
চলো সামনে গিয়ে বসি- খাবার এনেছ কি কিছু
জায়গাটা অন্ধকার জঞ্জাল বেশ উঁচু নিচু
কতকাল ওরা আর আসেনা এদিকে
বোধ হয় পথই ভুলে গেছে অথবা আমাদেরকে
তা তুমি কি করে এখানে এলে
একেবারে এসেছ- নাকি আবার ফিরবে
মেয়েকে স্কুল থেকে নিতে এসেছিলাম
বাস খুঁজতে হেটে হটে কোত্থেকে কোথায় যে ঢুকলাম
তোমাদের এলাকা নিয়ে কিছুই জানা ছিলনা
আজ তবে যাই- আমায় করো মার্জনা!
তা কোথায় তোমার মেয়ে- আসতে বলো
একসাথে গল্প হলে জমবে ভালো,
ক্লাশ শেষে ও আগেই ফিরে গেছে, দেখা হয়নি
তাহলে আর গিয়ে কাজ নেই- আমাদের মেহমান তুমি!
শোনো- একটা বাস স্টপ আছে কাছেই
তবে রাত এক’টায় বাস আসার কোনো সম্ভাবনা নেই
দিনের বেলাতেই লোকেদের এদিকে আসতে ভয়
ওরা বলে এখানে নাকি ভুতেরা রয়
আমরা কি ভুত- বলো তুমিই
নাকি আমরা কারো ঘাড় মটকাই
তোমাদের মতই আমরাও ছিলাম রক্তমাংশে গড়া
মরে গেছি তাই মিথ হয়েই কপাল পোড়া।
ভারী গলায় বললেন তিনি- আমি রবার্ট ক্লাইভ
সব ইন্ডিয়ানরা মনে করে আমি হিংস্র দখলদার বদ স্বভাব
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে আমি ছিলাম সেনাপতি
কোম্পানির স্বার্থ দেখতেই আমার যত কিছু কীর্তি।
কিন্তু আমি হত্যা করিনি নবাবকে কিংবা পলাশির ষড়যন্ত্র
ক্ষমতার লোভে মীর জাফরদের ছিল যত কূটতন্ত্র
ওদের দুর্বলতা সুযোগ করে দেয় আমাদের
প্রশ্ন করি- কোথায় ছিল তখন জনতা মুর্শিদাবাদের
কেবল একটা করে ঢিল ছুড়লেই আমরা হতাম পুরো ধংস
বিশ্বাসঘাতক কাপুরুষদের কাছে স্বাধীনতা কেবল উপহাস।
সতের’শ সাতষট্টিতে লন্ডনে ডেকে আমায় তদন্ত নানা অপবাদ
বৃটেনের জন্য এতকিছু করেও ভাগ্যে জোটে সুইসাইড।
আমি আলফ্রেড নোবেল জন্ম স্টকহোম সুইডেন
ইঞ্জিনিয়ার কেমিস্ট- রিসার্স টপিক নাইট্রোগ্লিসারিন
আবিস্কার করে ফেলি ডিনাইমাইট
বহু মানুষের প্রাণঘাতক ধংসযজ্ঞ ব্যাপক বিরাট
ভাই এমিলকে মরতে হয় ল্যাবে
সারা দুনিয়ায় একক মার্কেট প্রচুর অর্থ আসে হাতে
মৃত্যুর আগে শেষ বয়সে স্রষ্টাকে স্মরণ করে
প্রায়শ্চিত্য করি নোবেল ফাউন্ডেশন গড়ে
গুণীদের সম্মান জানাতে ব্যবহার হবে অর্থ সমস্ত
এরপর থেকে প্রতি অক্টোবরে ওটা নিয়ে সারা দুনিয়া ব্যস্ত
শান্তি, রিসার্স, সাহিত্য, চিকিৎসা, ইকোনেমিক্সে পদক এত এত
মানব উন্নয়নে বিশ্বকে প্রতিযোগিতায় আনতে পেরেছি তো।
মাইন ক্যাম্ফ পড়া আছে তোমার?
শুরু করলেন হের হিটলার
ইন্ নদীর তীরে ব্রুনাউ গ্রামে জন্ম আমার
কৈশোর যৌবন কাটে অস্ট্রিয়ার লিন্ৎস প্রিয় শহর
তখনই স্বপ্ন দেখতাম জার্মান অস্ট্রিয়া এক পতাকায় আনার
বিশ্ব জয় করব লাঙলকে উল্টো করে বানিয়ে তলোয়ার
পড়াশোনায় কখনই মন বসেনি
চিত্রশিল্পী হবার স্বপ্নে ভিয়েনা গমন- সুবিধে হয়নি
শেষে পোস্টকার্ড বিজ্ঞাপনে ছবি এঁকে সামান্য উপার্জন
এক হোস্টেল ছেড়ে আরেক হোস্টেলে যাযাবর জীবন
কি করিনি ভিয়েনায়- মজুর থেকে রং বিক্রির কাজে
উনিশ’শ তেরো সালে চলে আসি মিউনিখে
স্বাস্থ্যগত কারনে অস্ট্রিয় সেনাবাহিনীতে নিলোনা
চৌদ্দতে বেজে ওঠে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা
এবারে জার্মান আর্মিতে স্বেচ্ছাসেবকে চাকরি হলো
যুদ্ধে আহত হলাম- পদোন্নতি হয় করেপোরাল
ফার্স্ট ক্লাস আয়রন ক্রস- সে এক বিরাট ব্যাপার!
তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হার হলো জার্মানীর।
যুদ্ধ শেষে দায়িত্ব পড়ে গোয়েন্দাগিরির
চোখ কেবল জার্মান লেবার পার্টির ওপর
কাজে কাজে দলের ঘনিষ্ট হয়ে পড়ি
সেনা জীবন ছেড়ে নিলাম রাজনীতির হাতেখড়ি
দলের নাম বদলে পরে হয় নাজি পার্টি
তিন বছরেই জুটে ছাপ্পান্ন হাজার কর্মী
বার্লিনে ক্যু করার চেষ্টায় ব্যর্থ হলাম কুড়ি সালে
গোপন আদালত রায়ে ল্যান্ডসবার্গ দুর্গে কারাবাস দিলে
এখানে বসেই লেখা শেষ মাইন ক্যাম্ফ প্রথম অংশ
জেল ছাড়া পেয়ে ফের রাজনীতি নিয়ে মহাব্যস্ত
শক্তিশালি জার্মানী গড়ার মতবাদ লুফে নিলো তারা
দেশ জুড়ে দারুণ জনপ্রিয়তা- দলে দলে ভিড়ে যুবকরা
ত্রিশ সালে নাজি পার্টি ক্ষমতার ভাগ পেলেও ছিল দুর্বল
তেত্রিশে চ্যন্সেলর রাইখস্টাগ ইলেকশনে মেজরিটি প্রবল
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার বদলা ছিল কি হলোকাস্ট
নাকি ভিয়েনা আর্ট স্কুলে ইহুদি টিচার স্টুডেন্টদের দেয়া সেই কষ্ট?
চৌত্রিশ সালে আমি হলাম জার্মান ফুয়েরার
একনায়ক বলে অনেকে, তবে স্বপ্ন একটাই বিশ্ব জয়ের
চাপিয়ে দেয়া ভার্সাই চুক্তির অবমাননা থেকে পেতে হবে মুক্তি
আটত্রিশের বারো মার্চ অস্ট্রিয়া জার্মানী এক পতাকায় করি অন্তর্ভুক্তি
এক এক করে সফল হচ্ছে স্বপ্ন পুরণ
প্রথমে চেক অন্তর্ভুক্তি, পরে শুরু করি বিশ্বজয় মিশন
উনচল্লিশের পয়লা সেপ্টেম্বর জয় করি পোল্যান্ড
এরপর ডেনমার্ক, নরওয়ে, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড
গ্রেটার জার্মানিক রাইখ ঘোষণা- পুরো ইয়োরোপের নেতা হবে জার্মানি
চীন বাদ,সাথী হলো জাপান- অক্ষশক্তিতে এলেন ইতালির মুসোলিনি
একচল্লিশে নর্থ আফ্রিকা, বলকান, মিডল ইস্ট, ইরাকে ছিল জার্মান সেনারা
রয়াল এয়ারফোর্স ডাউন করার ব্যর্থতায় বৃটেন রয়ে গেলো অধরা
রাশিয়া দখলের ভুত মাথায় চেপে বসে
আক্রমন করলাম চার-পাঁচ মিলিয়ন সোলজার নিয়ে
সব ঠিকই ছিলো, শেষ মুহুর্তে বাহিনী আটকে যায় স্টালিনগ্রাদে
বাজে আবহাওয়া আর একটা ভুল সিদ্ধান্তের ফাঁদে
ধংস হয়ে গেলো আমার সিক্থ আর্মি- ওলটপালট হলো পুরো যুদ্ধক্ষেত্র
নইলে আজ অন্যরকম হতো পৃথিবীর ইতিহাস মানচিত্র।
শরীরটাও ভালো যাচ্ছিল না তত,
একের পর এক দিতে থাকি ভুল সিদ্ধান্ত
আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বোধ হয় উচিত হয়নি
এরি মাঝে পদচ্যুত হন নিজ দেশে মুসোলিনি
সুয়েজ খাল সিসিলি দ্বীপ দখলে নেয়া দুঃস্বপ্নই রয়ে গেলো
পয়তাল্লিশের শুরু থেকে জার্মানীর পতন শুরু হলো
দুর্ভাগ্যের থার্টিথ এপ্রিল ফরটি ফাইভ
রেডআর্মি আর মিত্রশক্তি মিলে ধংস করলো বন বার্লিন সব
বান্ধবী ইভা সহ আমার সুইসাইডের গল্প চলছিল এতকাল
আর্জেন্টিনা হয়ে ব্রাজিলে পালানোর কনসপ্রেসি থিউরি এলো
আসলে তোমরা কেউ জানো না সত্যিটা,
তাই লিখতে পারোনি কোনো এপিটাফ।
আলো ফুটছে চারিদিকে এবার বিদায়
কেবল আমাদের গল্পেই রাত ভোর হয়
তোমারটা কিছু শোনা হলো না আর
আরেক দিন এসে গল্প করে যেও আবার
তোমাকে কি এগিয়ে দিতে হবে
মনে হয়না সেটা আর লাগবে
তাহলে আবার ঘর বাড়ি চিনে
বেলা অবেলায় দিবে হানা- তা চাইনে।।