আজকাল তোমার দিন পাল্টেছে,
এখন আর তুমি জানান দিয়ে আসো’ না।
আসলেও টের পাইনা তোমার পায়ের আওয়াজ...
এমন হবেই বা’ না’ কেন!
তোমার রঙয়ে’ শরীর রাঙিয়ে,
খোঁপায় ফুল গুঁজে
তোমার পথে অভিবাদন জানানোর
কত জুটেছে তোমার এখন!
বলতেই হবে আজ;
হার মেনে গেছি আমি তোমার নির্লিপ্ততায়।
এখন তুমি আর আমায় গান শোনাও না।
কৃষ্ণচূড়ার লালে ঠোঁট রাঙ্গিয়ে,
খোঁপায় গুঁজে নাম না জানা বনফুল;
ভেজা পদ্মের মত কোমল তোমার পা ফেলে,
নীরবে পাশে এসে হাসির ঝঙ্কার তু’লে বলো না:
“দেখো, কেমন লাগছে আমায়”!
তোমার শরীর জুড়ে, আম্র-ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে,
আজ আর আমার সামনে আঁচল ওড়াও না।
আজ তোমার অনেক হয়েছে!
এই তো সে-বারও:
ভৈরবের তীর ঘেসে বসেছিলাম।
পা ছড়িয়ে আমার পাশে বসেছিলে তুমিও;
তোমার গায়ের পাগল করা বন্য ঘ্রাণ:
মাতাল করা অনুভূতির ঝড় তুলেছিল আমার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে।
রুক্ষ আমার এই চুলগুলো হঠাৎ দমকা হাওয়ায়,
এলোমেলো ক’রে দিয়ে বললে:
“কবি, কী এতো ভাবো তুমি, আমায় নিয়ে”?
সেদিন বলতে পারিনি তোমায়,
তুমি ছিলে আমার সারা অনুভূতি জুড়ে
অদ্ভুৎ এক আলোড়ন!
হৃদয় জুড়ে বয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনী প্রেম,
আর হালকা হাওয়ায় ঝ’রে যাওয়া
আমের মুকুলের মত না-বলা কথামালা!
আজও তুমি আছো;
প্রতিবারের মত এবারও এসেছো।
কিন্তু, কবিকে ভুলে গেছ ঠিকই;
মনে রাখো নাই, মনে রাখো নাই আমারে!
আজ তোমার অনেক হয়েছে;
তোমার দিন পল্টেছে; আধূনিকা হয়েছ তুমি।
আজ, হেঁটে যাও তুমি গেরুয়া সাঁজে
শহর, নগর, বন্দর, নদী
আরও কত গাঁও-গেরামের অলিতে-গলিতে।
গভীর চুম্বনে মেতে ওঠো তুমি
প্রমোদ-কাননের চিপায়।
হাজারো প্রেমিক-পুরুষের আঙ্গুল-সন্ধিতে
আঙ্গুল গুঁজে, হেঁটে যাও রাজপথ ধরে।
আজ তোমার দিন পাল্টেছে,
তোমার কবিকে ভুলে গেছ তুমি;
মনে রাখোনি আমায়।
আজ তোমার অনেক জুটেছে;
অনেক আধূনিকা হয়ে গেছ তুমি আজ!
হা’রে বসন্ত-কুমারী!
তোমার সেই সব কবিরা আজ বেঁচে নেই।
যারা তোমাকে চিরযৌবণা ভেবে এসেছে ‘যাবৎকাল;
আর তোমার নাগরেরা কেউ কেউ শিল্পপতি,
কেউ শল্য-চিকিৎসক!
বাকীরাও অনেক ব্যাস্ত!
আজ তোমার হাল হয়েছে কিনা
সেই মেয়েলোকেদের মত,
যারা প্রথম যৌবণে নিজেকে
সহজ-লভ্য করে ফ্যালে অন্যপুরুষে!
আর বিবাহিত জীবনে আপন স্বামীতে তৃপ্ত নয়!
বারজনের খোঁচানো আগুন,
একজনে দমেনা বৈকি!...
ব্যাস্ত পুরুষও বহুব্রীহি ছল জানে,
যেমন তুমি যুগে যুগে নবযুবার হাত ধরতে চাও!
আরও কিনা তুমি চিপসে গেছ সেই রমণীর মত,
যে জানে তার বয়স হ’য়েছে,
তবুও প্রসাধানীর তো অভাব নেই!
তুমি আধূনিকা হয়েছ আজ,
ভালো কথা,
বন উজাড় ক’রে দেওয়া কুঠারীর মত
পুরুষের শাসন থেকে মুক্ত হও,
সে ও ভালো!
কিন্তু, কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে তোমার নিরাপত্তা;
যাচ্ছেতাই তোমার জীবনে
একঘেয়েমি কি আসেনি?
মুখ ফুটে স্বীকার করতেও পারবে না আজ!
তুমি ফানুষ চেনো,
বন উজাড় করে শিল্পায়ন ভালোবাসো!
এ যুগের নারীর সাথেই তোমার যত মিল!
আর আমিতো তোমার নিগৃহীত প্রেমিকের মত,
ঘুরি তোমার পিছে পিছে;
তোমার তাল-খেয়াল খুঁজে মরি।
আমি ভালোবাসতাম সুধু তোমার প্রাকৃতিক রূপ-রস;
তোমার খেয়াল, তোমার ধেয়ান,
তোমার ঘ্রাণেই আমি মত্ত থাকতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু এমন তোমার পরিবর্তন,
তুমি যেন আর সেই প্রকৃতি নও,
যা আমাকে টানতো! তোমার এমন বিপর্যয়ে,
নিজেকেই প্রতারিত মনে হচ্ছে প্রতিনিয়ত!
যে ফাল্গুনে শুনতাম কোকিলের সুর,
আর ফুলের ঘ্রাণ ভাসতো তোমার বাতাসে।
এখন কোথায় সেসব?
ফাগুন আসলে দেখি সুধু বাসন্তী রঙয়ের বসন;
নর-নারীর মেলায় স্বগতঃ হও তুমি।
ফুল ফুটেছে কি?
সেখবর কে রাখে!
তবুও তুমি ঠিকই মিলিয়ে যাও সবার উচ্ছাসে।
আর আমি সেই ঈর্ষা-কাতর প্রেমিকের মত,
বুক চাপড়ে জ্ব’লে মরি!
যেন আমারই বঁধূ-যোগিনীর হাত ধরে
হাঁটে অন্য কেউ।
যে তোমাকে বোঝেনি কোনদিন,
বোঝেনি তোমার দরদ!
যেন ঘর ফেরারি তুমি তবুও কত খুশি।