তিলোত্তমা আড়ষ্ট হয়েছে
বকুল গাছটির গায়ে,
আর নেই যেন আড়াল;
কুড়ানো ফুলগুলি খসে
ঝরে গেলো আঁচল।
আঁচল তুলতে জানেনি সে---
ত্রিশোত্তরের স্বপ্ন শুনে;
এ সকাল হায়---
তের পার হয়নি আজও তার বয়স;
সূর্য্য তো উঠবেনা যেন সেও আজ লজ্জায়---
তার মুখে ছুড়ে দিলো লাল।
সকাল ঢেঙাতে ঢেঙাতে
বকুলতলায় গিয়েছিল আজ,
প্রতিদিনের মতো---
সবার আগেই উঠে,
ফুল কুড়ালো আঁচলে।
তারপর,
কোথা থেকে এলো সে যুবক;
দেও, নাকি দানবের মতন---
লোহার হাতের মুঠের ভেতর
আচমকা পিষে নিলো হাত---
বালিকার;
দেখেনি সে
বেমোড়ে ককিয়ে উঠলো;
কন্ঠে আর্তনাদ।
সদ্য ঘুম ভেঙেছে তার।
পাশের ঘরের ত্রিশোত্তর যুবক;
তিলোত্তমা চিনেছে তারে।
সে যুবক শোনালো তার স্বপনের বিবরণ।
বিয়ে কি--- শুনেছে আনারকলি,
বোঝেনি তখনো দাম্পত্যের কথা।
পুরুষে উজাড় হওয়া জানেনি সে,
তখনো শরীরে-মনে।
সংসার?
সেতো এখনো ঘরে আছে
ছবি আঁকার খাঁতা।
ছবি আঁকে:
আব্বু নিয়ে যাচ্ছে কাঁধে করে বৈশাখি মেলায়,
শিশুপার্কে--- ছুটির শুক্রবারে।
অথবা হাতখানা শক্ত করে ধরা,
স্কুলে যাচ্ছে--- রাস্তা পার করার ছবি।
টেডি বিয়ারটা পুরনো হয়েছে,
বড় ভাইয়া এনে দেবে বলেছে--- সামনের ছুটিতে।
আম্মু সেদিন কোথায় গেল,
ভাত চড়াবার সময়---
হাত পুড়েছে জ্বাল ধরাতে,
ভাত চাখতে গরম পানি;
উহু! হাতে এখনো ফোস্কা রয়েছে,
সারেনি ছ'দিন পরেও।
আব্বু সেদিন কত করে,
বকেছে অকারণ:
এতটুকু মেয়ে এখন কি দায়
চুলার ধারে কেন গেলি।
ঘুমে গেছিলো কাল---
সন্ধ্যার একটু পরেই।
রান্না শেষে রাতে,
আব্বু এসে ডেকে উঠালো:
ঘুমো-মুখে ভাত ঠেলেছে আব্বু,
আর, সে ঘুমেই খেয়েছে ভাত,
কত এমন রাত যায়,
নিজেও সে রাখেনা হিসেব।
আজও,
আড়ষ্ট সে সকালটার কথা জানেনি কেউ
বোঝেনি তার কোথাও---
শরীরের, কিংবা মন।
পয়নামা গেছে বাড়ী তার,
ঘরের দু'খুঁটি জেনেছে:
ছেলে বড়লোক,
গাঁটে কড়ি আছে,
মেয়ে রাজরাণী হবে।
বয়সে আর কী এমন!
সবাই বুঝেছে:
মেয়ে রাজরাণী হবে,
সুধু খুকিই জানিলো না।
কাঁচা হলুদের মানে বোঝেনি সে;
শুনেছে সুধু ধান-দুবলার গান,
তারপর,
তার ঘরের অদল-বদলে কেঁদেছে সে অনেক।
তারপরও আরো আটাশটা বছর ঢোক গিলেও,
জীবন কি--- বোঝার চেতন জাগেনি কখনো;
সুযোগ হয়নি হিসেব করার,
তার বয়স কত হলো।...
স্রষ্টার অত দামী দরদের এমন কী দিলাম দর!
তিলোত্তমারা বেঁচে থাকে বুঝি ওই তের বছরই!
২১.১০.১৫ (ভোর ৪ টা)
ঢাকা।