ওহোঃ হ্যাঁ,
সেই অটোগ্রাফের গল্পটা আজও বলা হয়নি তোমায়।
                         সন্ধ্যাটা মুষড়ে ছিল বুকের বামপাশটায়---কোন রকম
             বৃষ্টি আর বিজলীর ধড়মড়ানি সামলে নিয়ে এগিয়ে চলছিলাম,
                                     রাত তখন বেশ হয়েছে,
বৃষ্টির ফলা তার খেয়ালে ক্ষত-বিক্ষত করে চলেছিল
                                                                 উন্নত-যৌবনা-রাতকে;
পা আমার থমকে গেল কারো শরীরের কিনারে এসে;
                                               ডিঙোতে হবে তারে,
                     না হয় এগিয়ে যাওয়া হবেনা আর;
                                            সেই সাথে অনুযোগ বাড়লো আরো---
এত দিন আসিনি কেন এ পথে।
                                     কত সহস্রাব্দের অক্ষত যৌবন
                                             অনায়াসে ধরে রেখেছে সে, বললো---
আজ তবে এলে কবি!
                         আমি তো শুনেছিলাম--- এমন আমার
                                    ঢেউ-থল-থল নীল জলে ভাসতে চাওনা তুমি!
এমন আমার আমার উজাড় করা বুক
                                            তোমার নাকি ধাতে সয়না!
             কি হে কবি! আজ এলে যে!
                            আসো, রাত দেখো আমার শরীরে ;
দেখো এঁকে রেখেছি কত সুন্দর।

সত্যিই অমন উজাড়
                তার বুকের ঘর্ষন আমাকে চোখ ফেরাতে দেয়নি;
                                আকাশে ভারি মেঘ ছিল,
চাঁদটাও যেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে উদাস; লক্ষ্য করেনি কিছুই,
                তারারা রাত পাহারায় ফাঁকি দিয়ে
আসর বসিয়েছিল মেঘের ওপার দেশে,
                 তাদেরও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই যেন।

শরীর টলছিল আমার ঘুমে, ক্লান্তিতে ---
                          চোখ টানছিল তার রূপ।
অন্ধকারে তার মেঘ-ঘোলা চোখ আর রাতের রং মিশে---
আহ! তার কোন রঙে কি মিশিয়ে এমন রূপ,
                                আমি যদি জানতাম!
বারবার তার চোখ যেন রঙের ঘোরে ফুঁসে ফুঁসে
সাদা গোলাপের পাপড়ির মতন ছড়িয়ে পড়ছিল।

অত ক্লান্ত আমি,
            তবু এই অশরীরি মুগ্ধতার যেন কোন ক্লান্তি নেই!
চোখ ডুবিয়ে ধুঁয়ে নিতে চাইছিলাম এমন মুগ্ধতা,
               গা ঘেঁসে দাড়াতেই ফাঁস হলো তার জারি-জুরি;
তার চোখের আরও কাছাকাছি হলাম,
               অনুযোগ ভুলে ব্যাস্ত হলো নিজেকে লুকোতে,
                           কত ছল জানে রে সে!
এপাশ ঘোরে , ওপাশ ঘোরে ;
                        আমি দেখি তার রূপ!
ঘুরে ফিরে সাপ যেন মুচড়ে মুচড়ে সেঁধিয়ে যাচ্ছে ভেতরে
তবু সতীত্ব রক্ষায় আমায় যেন ছোঁবেনা সে,
অবাঞ্চিত ভাবে ধরতে চেয়েছিলাম হাত,
                               সেখানেও তার আড়ষ্টতা!
সংকোচ ভোলার চেষ্টা করে চিন-পরিচিতির বেশ ছাড়লাম,
               চোখে চোখ রাখতে জিঁদ চেপে গেলো আমার,
তখনো তার আড়ষ্টতা কাটেনি;
যায়নি মুখ থেকে সেই সলাভ কাঁচু-মাঁচু ভাব;
বলে বসলাম একটু খেয়ালী সেঁজে,
অসম্বিত অপ্রতিভ কণ্ঠ আমার---
               "ধুর, বোকা মেয়ে!
অন্ধকারে কি রূপ ঢাকা যায়--- দেদীপ্যমান ওই শিখায়!
                   অন্ধকার নিজেই তো জ্বলে-পুড়ে পলায়নপর।
যত লুকাতে চাস, ততই---
              বিজলীর চমকে জ্বলে ওঠে অন্ধকার"!

বুঝেছিলাম ফুটানি যত বাগে পেলেই;
                           ছোঁয়া লাগলেই গলে যায়।
                               তবু আড়ষ্টতা তার কেটেছিল বটে!

জীবনের হাজারটা যৌবন বৃথা মনে হয়--- হয়ে যেত
                                                      তারে কাছে না পেলে,
হাজারটা সাহিত্যের মসনদ
                                আক্ষেপ করবে তারে নিয়ে না লিখলে,
এত হাজার বছরের যৌবন নিংড়ে --- মাত্র একটা রাতে
কতটুকু আমায় দিয়েছিল সে নিজেও রাখেনি হিসাব;
                                             তার শরীরে এমন গাহন,
অথচ একটা লাইন লিখতে পারেনি যে কবি
                                                               সে আমি নই;
এত সহজে ব্যার্থ হতে দিতে চাইনি আমার কবি-জীবন।

আমার গাল ঘেঁসে গলার পাশ দিয়ে
                                            ঘাড়ের কাছ পর্যন্ত,
ছুঁয়ে নেমে গিয়েছিল মেঘের শীতলতা চোখে রেখে;
                               রাত শেষে ভেঁজা কাশফুলগুলোকে দেখেছিলাম---
চুপিচুপি সারা রাত দেখেছে বোধ হয় আমারে।

জন-মানুষের চরণমুখর ভোর আলো ফোটাবার আগেই,
                              আমার ঘাড়ের কাছে তার নিশ্বাস ফেলে বলেছিল সে---
"কালি নেই, কলম নেই কবি!
                        আছে তোমার জন্য আমার অফুরন্ত যৌবন;
নিশ্বাসটুকু নিয়ে যাও আমার--- অটোগ্রাফ...
                       হ্যাঁ আমি পদ্ম-কন্যা, বলো গিয়ে তোমার কবিতারে"।




০৪.০৯.১৫
পদ্মা নদী, মাওয়া ফেরীঘাট।