মাটি খুঁড়ে একটা ঘর বানাচ্ছে
ঐ তো ওখানে আমার স্বজনেরা
ওই ঘরটা আমাকে ডাকছে
এখানেই আমি অনন্তকাল থাকব।

টগবগে উতরানো গরম পানি
আনা হলো আমাকে গোসল দিতে,
আমি চিৎকার করে বলছি
ওরে! তোরা কি জানিস না?
এ পানি আমাকে ঝলসে দেবে।

আমার চিৎকার কেউ শুনলো না
এবার মগ ভরে বরই জল ঢালবে
আমি চেচিয়ে বল্লাম ওরে খসে যাবো!  
কেউ শুনেছে বলে মনে হচ্ছে না।

আমার সারা দেহ গরম জলে চুপচুপ
আমি ভীষণ আরাম অনুভব করছি
না এত ফুটন্ত জল একটুও কষ্ট দিচ্ছে না
কষ্ট পাচ্ছি জননীর আত্মচিৎকারে।

আমার স্বজনেরা সকলেই কাঁদছে
বুক চাপড়ে কাঁদছে আমার গর্ভধারিনি
আমি দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বল্লাম,
মাগো কাঁদিস না, আমাকে বিদায় দে।

দুঃখিনী আমাকে শুনছে না!
ভীষণ দুঃখে দুঃখিনীকে ধরতে
দু হাত বাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম,
মাকে জড়িয়ে ধরতে পারছিনা!

স্বজনদের সামনে আমি
চিৎকার করে ডাকছি
ওরা কেউ আমাকে শুনছে না কেন?
আমি তো এখানে ওদের সামনে।

দ্রুত আমার ঘরটায় আমাকে
পৌঁছে দেয়া হবে এবং সকলেই
আমাকে সামনে রেখে এখন
কাতারে কাতার সামিল হয়েছ।

আমার বড্ড মন কেঁদে উঠছে
চিৎকার করেই কেঁদে উঠছে
আমার জননী এখনো কাঁদছে
তার এই কান্না আর থামবে না।

দুজনের চার হাতে পরম যতনে
আমাকে শোয়ালো মাটির ঘরটায়
আহা কি ধবধবে চকচকে বিছানা
আহা কত সুন্দর আমার ঘরখানা।

এবার তো বাঁশের ছাদ হচ্ছে
আহা কি চমৎকার সুন্দর ছাদ
আমি দৌড়ে বেরিয়ে এলাম
মাগো আর কাঁদিস না বিদায় দে।

বিদায় দেরে মা আর কাঁদিসনা
তুই বিদায় না দিলে মোর ঘুম আসবেনা
ও ঘরটা যে আমাকে ঘুম পাড়াবে গো
মা আমার নিদ্রা ভঙ্গ হবে তুই কাদিস না।

ফিরে আসতে হলো নিজের ঘরে
দুটো বাঁশের ফাক দিয়ে ঢুকে পড়েছি
খুব কষ্ট হচ্ছে মায়ের জন্য খুব
আমাকে ঢেকে দেয়া হলো বাঁশের নিচে।

এক মুুঠো মাটি পড়লো ঘরটায়
বাঁশের ফাঁক দিয়ে দেখছি ওমা
এতো মাটি নয়! রুপোলি আলোর খন্ড
কিছু আলো ফাঁকফোকর দিয়ে এসে পড়ল
আমার দেহের উপর।

কয়েক মুুহুর্তেই মাটির ঘরটা
চিরতরে মাটি বন্ধি হয়ে গেলো
এসময় রুপোলি আলোয় হঠাৎ
পুরু ঘর হলো অদ্ভুৎ আলোময়।

আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে
ভীষণ ঘুম ভর করেছে আমার চোখে
আমার খুব ইচ্ছে হলো আর একবার
মাকে বলি মা কাঁদিস না।

অনন্ত এক ঘুম আমার চোখে
বহুকালের এ ঘুম এসেছে আজ
আমি ঘুমিয়ে পড়ছি তবু বলছি
চিৎকারিয়া বলছি মা, কাঁদিস না।

পৃথিবীর মধ্যেই আমার ঘর
আমি দেখছি জননীর বিলাপ
খুব ইচ্ছে হলো লিখি 'কাঁদিসনা'
চিঠিটা মাকে পৌঁছাবে কে?

পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ ব্যাবস্থা
আমার এ ঘরটায় নেই
আমি দেখছি মা কাঁদছে বুক চাপড়ে
আমিও কাঁদছি মা মা চিৎকারে।
======================
হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
২৫শে জুন, ২০১৭