মিছিলটা হয়েছিলো প্রায় তিনশো গজ লম্বা। টানা পাঁচ দিন খেটেখোটে
লোক জড় করেছিলে। বিপক্ষ দলের সামনে ইজ্জত রাখা চাই।
গলিটা দখলে নিয়ে সাজালে প্যান্ডেল। ঝাঁঝালো ভাষণে
জনপদ কাঁপিয়ে সার্থক জনসভা।
নেতা তোমাকে কাছে ডেকে পরিপাটি চুলগুলো
আঙুলে উলোঝুলো করে দিয়ে বললো— “বেটা বাঘের বাচ্চা, তোর মতো
কেজো ছেলে আগে দেখিনি, একেবারে বিপ্লবী চে গুয়েভারা”।
তুমি বাহবা পেয়ে গলে গেলে রঞ্জু। বুঝলে না, ছোটদের বগলবন্দি রাখতে
বড়রা এমন প্রশংসার ফাঁদ প্রায়ই পাতেন।

পার্টি অফিসে প্রতিদিন কত কাজ, কত পরিকল্পনা। নেতারা তোমায়
পিতার মতই স্নেহ করে। গোলটেবিল বৈঠকে
জ্বালাময়ী আলোচনায় রক্ত গরম।
বাধা এলে অস্ত্র নেবে, প্রয়োজনে প্রাণ দেবে। অফিসের গোপন ঘরে
নেতারা গলা ভেজাতে ভেজাতে তোমাদের হাতে বোতল দিয়ে বলে-
“নে বাবারা, খা... শুধু খেয়াল রাখবি যেন হুঁশ ঠিক থাকে”।
ভেবে দেখেছো কি রঞ্জু, তাদের ছেলেরা এসব নোংরা জল
ছোবার কথা কল্পনাও করতে পারে না। মায়েরা পড়ার টেবিলে
গরম দুধে গ্লাস ভরে রাখে।

কালো কাচ আটা পাজারো গাড়ি থামল রাস্তাতে। জানালার কাচ খুলে
নেতা হাত বাড়িয়ে দিলেন হাজার টাকার দুটো নোট। বললেন—
“রঞ্জু... ঝাঁপিয়ে পড় বাবা, মান সম্মানের ব্যাপার”।
তুমি ঝাঁপিয়ে পড়লে পেট্রোল-বোমা আর ককটেল হাতে। দুদিন পর
তোমার ঠিকানা হলো সরকারি হাসপাতালের নোংরা বিছানা। হাত দুটো
উড়ে গেছে, দু’পায়ের হাঁটু অবধি ব্যান্ডেজ।

একবারও ভাবলে না, তিনি তোমার কেমন বাবা!
তার সম্পত্তির ভাগ পাবে? তার কালো কাচের পাজারোটা
তোমাকে দেবে? দেবে মখমল বিছানো বেডরুমে ঘুমানোর অনুমতি?
তার সম্মান রাখবে তুমি! তার ছেলে বিদেশে পড়ে,
নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে; সে তো ঝাঁপিয়ে পড়ে না!

তোমার হুঁশ কবে হবে রঞ্জু! তুমি ছিলে তাদের
স্বার্থের হাতিয়ার, কাঁটা তোলার কাঁটা।
তোমার মা হাসপাতালে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে, বাপ কাঁদে বারান্দায়।
সেই নেতারা, তোমার পাতানো বাবারা, একবারও তো
দেখতে এলো না! বলি রঞ্জু, তোমাদের হুঁশ কবে হবে!

❑❑❑
কবিতা : রঞ্জু, একটা হাতিয়ার...
কবি : #আকিব_শিকদার
কাব্যগ্রন্থ : দৃষ্টি মেলো জন্মান্ধ চোখ (২০২৩)