মা। যখন সন্তানের মুখে স্তন গুজার কথা, দোলনায়
দোল তুলে ঘুমপাড়ানিয়া গান শোনাবার কথা
দাসির হাতে দুধের বোতল দিয়ে মজেছো টিভি নাটকে, সিনেমায়।
বাবা। যখন সন্তান নিয়ে দৌড়-ঝাপ, লুকোচুরি, ফুটবল
এটা ওটা খেলাচ্ছলে কোলে তুলে চুমু বিলাবার কথা
পোষা কুকুরের শিকল ধরে ঘুরছো পার্কে-ময়দানে, ভালোবেসে
পিঠের লোমে বুলাচ্ছো হাত।
শিশুটা কাঁদছে একাকিত্বের যন্ত্রণায়, জানালার গ্রীলে
ঠুকছে কপাল। অথচ তোমরা বন্ধুবান্ধব আর
প্রিয় খুনসুটিতে কাটাচ্ছো দিন-রাত, ছেলেকে রেখে অবহেলায়।

তোমাদের সন্তান ঘরের দেয়ালে একটি দুটি অক্ষর
নচেৎ ফুল-পাতা-চিত্র এঁকে দাড়িয়েছে কুড়াতে প্রশংসা।
ভ্রুয়ের পাশে যন্ত্রণা এনে ভেবেছো- ধুর ছাই...
কেন এই জঞ্জাল পোষা! ঢের ভালো
নিঃসন্তান জীবনটা উপভোগ। অথবা তাকে শিশু-সেবাকেন্দ্রে
দেবে নির্বাসন আগামী মাসেই।

হুম... তোমাদেরকেই বলছি... শোন হে জননী এবং জনক
তোমাদের দুর্দিনে, ধরো... প্রবীণ বয়সে
হাতের লাঠি অথবা চশমা যদি হাত ফসকে নাক উপচে
পড়ে যায়, আসবে না কেউ ছুটে পুনরায় তুলে দিতে।
ছেলেটা পাশের ঘরে বউ নিয়ে মাতবে
হাসি-তামাসায়! তোমরা একা অন্ধকারে শক্তিহীন
সন্ধ্যাবাতি জ্বালাবার। পিঞ্জিরায় কাঠবিড়ালী, তাকে সময় সময়
খাবার দিতে ভুলবে না পুত্রবধু।
অথচ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকে অষুধ সেবনে
প্রায়ই হবে ভুল। আর যদি বড়ো বেশি বোঝা হয়ে ওঠো
তোমাদের আশ্রয় হবে বৃদ্ধাশ্রম, শুধু বৃদ্ধাশ্রম।

***
কবিতা : পরিণতি
কবি : আকিব শিকদার
কাব্যগ্রন্থ : জ্বালাই মশাল মানবমনে, ২০১৮