মেয়েটা হাতের একটা চুড়ি খুলে বললো- ‘এই নাও, রাখো।
যেদিন তোমার ঘরে বউ হয়ে যাবো, বাসর রাতে পরিয়ে দিও।’
ছেলেটা একটা চাবির রিং মেয়েটাকে দিয়ে বললো-
‘যত্নে রেখো। আমাদের সংসারের সব চাবি
এটাতে গেঁথে আঁচলে ঝুলাবে।’

একদিন ছেলেটার আবদার- ‘তোমার একটা ওড়না
আমাকে দেবে? মধ্যরাতে বালিশে জড়াবো, আর
তোমার বুকে নাক গুজে রেখেছি ভেবে চুমো খাবো।’
আরেকদিন মেয়েটা নাছোড়বান্দা-
‘হলুদ পাঞ্জাবিটা তো আর পরো না। আমাকে না হয়
দিয়ে দাও, বুকের উপর রেখে ঘুমাবো।’

তাদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তোলা অন্তরঙ্গ ছবির একটি
ছেলেটা তার মানিব্যাগে রেখে দিলো। ভাবটা এমন,
যেন উপার্জিত সকল টাকা বউয়ের কাছেই জমা রাখছে।
এদিকে মেয়েটা এমনই অসংখ্য ছবি মুঠোফোনে
গোপন ফোল্ডারে সেভ করে নাম রাখলো ‘সুখি সংসার’।

কালের আবর্তে কি হলো কে জানে (হয়তো পরিজনেরা
মানবে না, নয় তো অন্য কিছু) মেয়েটা একটা আংটি
রেপিং পেপারে মুড়িয়ে ছেলেটার হাতে দিয়ে বললো-
‘যে তোমার বউ হবে, তাকে দিও। বলো আমি দিয়েছি।
আর আমাকে কোনোদিন ভুলে যেও না।’
ছেলেটা সে আংটির বক্স হাতে নিয়ে
ছুঁড়ে মারলো নর্দমায়। তারপর দুজন দুজনকে
জড়িয়ে ধরে বসে রইলো কতক্ষণ। দুজনেরই চোখ বেয়ে
নামলো নীরব কান্না।

তারপর? তারপর যা হবার তাই হলো। প্রকৃত ভালোবাসা
কোনোদিন মরে যায় না। মেয়েটার বিয়ে
হয়ে গেলো অচেনা জনের সাথে।
প্রেমিকের দেওয়া চাবির রিংটাতেই সব চাবি আঁচলে বেঁধে
শুরু করলো সংসার। আর ছেলেটা অন্য মেয়েকে বিয়ে করে
হাতে পরিয়ে দিলো প্রেমিকার চুড়িটা।  

❑❑❑
কবিতা : অনন্য উপহার
কবি : আকিব শিকদার
কাব্যগ্রন্থ : দৃষ্টি মেলো জন্মান্ধ চোখ (২০২৩)