কবিতার পটভুমি : পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জঙ্গলমহল এলাকা । প্রকৃতির বৈমাত্রিসুলভ আচরনে প্রায় সমগ্র এলাকাটিই অনুর্বর কাঁকুরে লালমাটি ও শাল মহুয়ার জঙ্গলে আকীর্ণ । বেশীরভাগ অধিবাসীই বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর আদিবাসী সম্প্রদায়ের । তাদের জীবন সংগ্রাম বড়ই কঠিন, দুঃখ-দারিদ্র তাদের আজীবন সঙ্গী, আবার তাদের মতো শান্তিপ্রিয়, সরল মানুষ আমাদের মধ্যেও বিরল । এহেন জঙ্গলমহল এলাকা ২০০৬-২০১০, এই পাঁচ বছর সময়কালে হয়ে উঠেছিল তথাকথিত মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল, ভারতীয় তথা বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । সেসময় বহু মানুষ এই সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন, এমন একটা দিন ছিল না যেদিন জঙ্গলমহলে রক্ত ঝরেনি । ২০১১ থেকে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরে আসতে শুরু করলো কারন তথাকথিত সন্ত্রাসবাদীরা বেশীরভাগ নিহত কিম্বা কারাগারে বন্দি । অথবা অন্য কারনও থাকতে পারে । যাইহোক দুঃখ দারিদ্র জর্জরিত জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা যে প্রকৃতই শান্তির পূজারী এবং দেশের অগণিত মানুষের মতোই দেশ গড়ার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তা এই কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ।
মারাংবুরুর নামে মুরা
কিরা কাটছি আজ
লালমাটিতে সনা ফলাই
দেখাই দিব কাজ ।
বোমা গুলির বারুদভরা
বিষাই গেছে মাটি
সবুজরাঙা গাছের ডগা
আগুন পুড়া ঝাঁটি ।
বনের হরিণ খরগুষরা
পালাই গেছে ভয়ে
রক্ত খেক্যা শিয়ালগুল্যা
আজও গেছে রয়ে ।
বনের মাটি রক্তভিজা
বদলা লিয়ার খেলে
গাঢ়ার নিচে কঙ্কালরা
আজও কথা বলে ।
হামরা যত আদিবাসী
লকের কাছে খুনী
পাহাড় ফাঁড়্যে ডুংরিটিলায়
মুরাই বীজ বুনি ।
করবো সবুজ লালমাটিটো
রক্ত ঝরা শেষ
ঘুঁচাই মুদের কলঙ্কদাগ
গড়বো লতুন দেশ ।
শব্দার্থ
মারাংবুরু (সাঁওতালদের ইষ্টদেবতা); কিরা (শপথ, দিব্যি); বিষাই (বিষাক্ত হয়ে যাওয়া); ঝাঁটি (জ্বালানি কাঠ); খরগুষ (খরগোষ); গাঢ়া (গর্ত); ডুংরিটিলা (ছোট ছোট ঢিপি); ঘুঁচাই (মোচন করা)