কবিতার পটভূমি: পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিম প্রান্তে ঝাড়খন্ড রাজ্য লাগোয়া ছোট্ট গ্রাম আমলাশোল । অনধিক ১০০ শবর পরিবার অধ্যুষিত এই গ্রামের মানুষের জীবনযাপনের অন্যতম উৎস লাগোয়া জঙ্গল থেকে সংগৃহীত খাদ্য ও অন্যান্য উপাদান । বন্যা প্রতিরোধের অছিলায় জঙ্গলের প্রান্ত বরাবর গভীর খাল কাটায় বেচারা শবর পরিবারগুলি গভীর খাদ্যসংকটে পড়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে ২০০৪ সালে অনেক শবরের অনাহারে মৃত্যু ঘটেছিল । জেনে রাখা ভাল শবর উপজাতি এই উপমহাদেশের প্রাচীনতম উপজাতি গোষ্ঠীগুলির অন্যতম ।
ঠিক এরকমই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০১৩ সালের প্রথম দিক যেখানে বীরভূম জেলার বিহার লাগোয়া সীমান্তে কাঁটাপাহাড়ী গ্রামের ১৭ জন মজদুর কিম্বা তাদের পরিবার সদস্য অনাহারে অথবা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রান হারায় । কাঁটাপাহাড়ী লাগোয়া একটি পাথর খাদানের মজদুর ছিল তারা । বেসরকারী মালিকানায় চলা ঐ পাথরখাদান হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়াই মজদুর পরিবারগুলি গভীর খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হয়েছিল । আমার আজকের কবিতার বিষয় সেই মর্মান্তিক ঘটনা ।
আমলাশোলের দগদগ্যা ঘা
আজও তক্ক নাই শুঁখাই,
কাঁটাপাহাড়ীর মরণ মিছিল
দংশে দিলেক এখন সিঁটাই ।
ছিল্যা-পিল্যা সকাল থাক্যে
মরছে কাঁদে ভাতের লাগ্যে,
কথাই পাব চাল বেসাতি
নাই কুছু পাই ভিক্ষা মাগ্যে ।
পাথর খাদান বন্ধ এখন
রুটি রুজি শিকাঁই তুল্যে
পেটের খিদা মিটছেনা আর
গুগলি শামুক শালুক মুলে ।
হাত লরু-লরু পা সরু-সরু
আমসির পারা মুহ ক'টা,
পিঁচড়ি পড়া চইখগুল্যাতে
আন্ধার নামছ্যে ঘুটঘুট্যা ।
হাড় জিরজিরা মদনার মাঙ
মরেও পাল্যনা ক'ন ছুটি
চুপস্যা বাঁটটো চুষ্যে খাছে
দেড় বছরের ছুটকি বিটি ।
রিলিফের চাল লাপসি ঘাঁটা
উলটি উঠে ছিল্যা-পিল্যার,
ঝন্টার বেটি মঙলার বেটা
হাসপাতালের আগেই কাবার ।
ভাত বেগরে জীবন যাছে
দে'ন একটা আইন করে,
পেটের খিদা অভাবটোকে
জেলে ঢুঁকাই তড়প্যে মারে !
কিছু শব্দের অর্থ :
তক্ক (পর্যন্ত); বেসাতি (খাদ্য উপকরণ);
পারা (মতো); মুহ (মুখ); পিঁচড়ি (চোখের কোনায় জমা পদার্থ); চইখগুল্যাতে (চোখগুলোয়); মাঙ (বৌ); লাপসি (ভাঙা চাল দিয়ে তৈরী খিঁচুড়ি); উলটি (বমি); বেগরে (ছাড়া, বিনা)