ও দিদিমনি, চিইনতে লাইরছিস ন’কি ?
হামি শিরিংডিহির বাবুরাম মাহতোর বেটি
বাতাসী গো ! তুদের ইস্কুলেই তো পড়তি ।
তুই তো হামদের কেলাসে বাংলা পড়াতিস,
সন্ধি সমাস বচন বাগধারা আরও কত কি
কেনে জানি নাই বাংলায় সবলে বেশি নম্বর
পাইলেও তুই হামকে কভুও দেইখতে লারতিস
টুকু গলতি দেইখলেই চড় থাপ্পড় ধমক ধামক
মাইনে লিছি কভুকভু বাংলা বলার ফাঁকে ফাঁকে
কুর্মালি বুলিগুল্যান ইদিক উদিক থাইকে পিঁচকে
বে-খিয়ালে বাহিরাঁই যাইত – কি করা যাবেক ?
মানুষ তো আদতের দাস – পাইল্টাবেক নাই।
সকাল সঞ্ঝ্যা ঘরে বাপ মাঈ ভাই বহিন
মহল্লার সহেলী কমলী মুন্নি শরাবনীর সঙে
ই ভাষাতেই মিঠা তিতা ঝাল হাসি দিল্লাগী
ই ভাষাতেই দুখ দর্দ সুহাগ আবদার গুস্সা
ই ভাষাতেই হামদের বান্দনা করম আখাইন
টুসু ভাদু ঝুমুর ছাতা মকর গাজন মনসা
ই ভাষাতেই হামদের লাইড় কাটা বচপন
কিতকিত লুকাছুপি পেরেম পীরীতি সুহাগন
ই ভাষাতেই সংসার বেটা বেটি শাশ শ্বশুর
মহুইল্যার ল্যাশা ঝগড়া ঝাটি চিতায় উঠা
ইস্কুলের কটা ঘন্টায় কি সব পাইল্টে যাবেক ?
ও দিদিমনি, তুর মনে আছে একদিন হামার
কান ধইরে তুই কেলাস ভত্তি ছিল্যা মেইয়্যার
ছামুতে হামকে বেইজ্জত কইরে বইলেছিলি
তুদের এই ছোটলোইকা ভাষাটোর লাইগেই
তুরা কনদিন শির উঠাইতে পারলি নাই
লিখাপড়া তুদের লাইগে লয়, যা খাঁচি লিয়ে
গবর কুড়া, গুঁইঠা দে, পেটটো চইলবেক।
না গো দিদিমনি, হামকে খাঁচি লিয়ে গবর
কুড়াইতেও হয় নাই, গুঁইঠাও দিতে হয় নাই ।
আর দিতে হলেও ক্ষেতি নাই, মেহনতের কামে
শরম নাই, গরীব হওয়াতেও কন লইজ্জা নাই ।
তবে দিদিমনি, আজ তূকে একটো গড় কইরব ।
তুর বেইজ্জতি বহুৎ কাম দিয়েছিল, হামার মনে
জিদ আইনেছিল । কুরমীদের মেয়্যাও সব পারে ।
ইরপর তো চাকলতোড়ের ইস্কুল থাইকে বোর্ড
পরীক্ষায় রিকর্ড লম্বর লিয়ে পুরুল্যার কলিজে
কলিজ থাইকে ভার্সিটি, সিখানেও সবকে টইপকে
পেরথম– তবুও দিলে চিনচিন করে তুর বেইজ্জতি
ইয়ার পর তো ইতিহাস – এক অজ পাড়া গাঁয়ের
কুরমী ঘরে জম্ম লিয়া বাতাসী সিভিল সার্ভিস
পরীক্ষা উতরাঁই আজ তুরেই শহুরের বি ডি ও ।
আইজ একুইশ্যা, মায়ের ভাষার কর্জ চুকানোর দিন
শহুরের নামীদামী কবি লেখকদের একুইশ্যা পালনে
আইজ হামিই পরধান অতিথি আর তুই সভাপতি।
সভাপতি হইয়ে, তুকে তো কুছু বইলতেই হবেক
আইজ খালি বাংলা লয়, পিরথিবীর হাজার হাজার
ভাষাকে ইজ্জত দিবার দিন, মুদের কুর্মালিও আছে।
ইজ্জত দিবি ? তবে সিদিন ইজ্জত দিস নাই কেনে?
তুদের পারা ভন্ঢদের লাইগে আজ হাজারো ভাষা
মরণগাঢ়ায় ঢুইকতে যাছে, তুর বাংলাও বাদ নাই।
দু পাতা লিখলেই কেউ সাহিত্যিক হয়না দিদিমনি
আসল সংস্কৃতি তো মনে, আগে মনকে সাফ কর
সব ভাষাকে ইজ্জত দে, তবেই তুর ভাষা বাঁইচবে
লিজের ভাষার ইজ্জত বাঁচাইতে যারা জান কুরবানী
দিয়েছিল উঁদেরকে বেইজ্জত করার এক্তিয়ার তুর নাই।
হামার যা বলার তূকেই বইলে দিলি, তুদের এই
মুখড়াধারীদের মিটিনে হামার কুছুই বলার নাই
চললি গো দিদিমনি । রামজীবন, গাড়ী লাগাও ।