দুইদিন পর পর অফিসের ডিউটি পড়ে সুমিতের
ডিউটির দিন আসলেই ঘুম থেকে উঠে গজ গজ করতে থাকে
‘সারাদেশের মানুষ বাসায় বইয়া আছে
আর আমার? আমার যাইতে হবে অফিসে।
ক্যান? আমাগে জীবন কি জীবন না নাকি?’
বাসা থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত গজ গজ করে সুমিত
পাশের বাসা থেকে জানালা দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে
অসহায়ের মতো সুমিতের দিকে তাকিয়ে দেখে মনিরুল আর ভাবে
‘আহ চাকরি তো নয় যেন বাপ দাদার রেখে যাওয়া জমিদারী
মহামারীতে সব মানুষ মরে গেলেও এদের বেতন খাড়া
কি বোকামোই নাই করেছি
চাকরির জন্য গ্রামের পৈত্রিক ভিটেটুক বেচলেও তো হইতো
সরকারী অফিসের একটা পিওন হলেও আজ নবাবী করা যেত
কোর্ট কাচারী আর সরকারী অফিসের পিওনেরা
দু’চারটা করে বাড়ি করছে আজকাল’
এই বয়সে মাথার চুল ছিঁড়লে টাক পড়ে যাবে
বুড়ো ভেবে কেউ আর কাজও দিতে চাইবে না আর
কথাটা মনে হতেই
মাথা পর্যন্ত উঠে যাওয়া হাত সরিয়ে নিল মনিরুল
লকডাউনের কারনে আয় রোজগার নাই এক বছর ধরে
দুই বেলা বউ বাচ্চাকে পেট পুরে ভাত খাওয়াতেও পারে না
বাসা ভাড়া বাকি পড়েছে অনেকদিনের
এক মার্চের লকডাউনের রেশ না কাটতেই
শুরু হল আরেক মার্চের নতুন ধরনের কঠোর লকডাউন
রূপচর্চা করার জন্য, আলতা লিপস্টিক কেনার জন্য মার্কেটে ভিড় করা যাবে
কিন্তু না খেয়ে মরলেও অফিস-আদালতে কাজে যাওয়া যাবে না
রাগে ক্ষোভে চোখ মুখ রক্ত আভায় লাল হয়ে উঠল মনিরুলের
থর থর করে কাঁপতে থাকল, ঘামতে শুরু করল
সেইসাথে শুরু হয় শ্বাসকষ্টও
দৌড়ে আসে দুর্বলদেহী স্ত্রী সেলিনা
বাতাস করতে করতে পাশের টেবিলে রাখা মগ থেকে
হালকা গরম পানি দেয় মনিরুলের মুখে
গরীবের টোটকা চিকিৎসা
করোনায় হাসপাতাল মানেই লাখ টাকার চিকিৎসা
ব্যাকুল হয়ে মেয়েকে ডাকে সেলিনা
খুশি, তোর আব্যাক বাতাস কর
দেখ, কেমন তরা কছছে
পাখা দিয়ে বাতাস করে খুশি
একটুখানি ভালো লাগলে মনিরুল বলল
‘দে মা বাতাস দে, ঘরে থাইকা বাতাস খাই
বায়রা যাওনের দরকার নাই
কিছছু খাওনেরও দরকার নাই
কারে কি দোষ দিমু
আমাগো মতো মানসেরই তো আর খুদা লাগে না
হেলল্লিগা লকডাউনও শেষ হয় না’
হাত থেকে পাখাটা রেখে শান্ত চাহনিতে
মন দিয়ে মনিরুলের কথা শুনে খুশি
আঁচল দিয়ে চোখ মোছে সেলিনা বলল
লকডাউন কি শুধু গরিবের লাইগাই দেল নাকি?