এটা কোনো কবিতা না।
বছর দশেক পর বড় ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে আসছি। বাড়িতে সবাই উঠোনে বসে গল্প করছিল, আমিও তাদের সাথে বসে গল্প শুরু করেছিলাম। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে তাদের জমানো গল্পে আমিও আমার কথা যোগ করতে লাগলাম। মিনিট ত্রিশ এভাবে চলার পর হঠাৎ আমার চোখ পড়ল বাড়ির উঠোনে থাকা অর্জুন গাছটার উপর। বেশ বড় সড় গাছ, বাড়ির উঠোনের যেখান টায় বসে আমরা গল্প করছিলাম সেখানে গ্রীষ্মের কড়া রোদে এই গাছটি উঠোনের বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে ছায়া দিয়ে থাকে। প্রথমেই দেখলাম গাছটির উপরের দিকের একটি শাখা ও নাই, সব কেটে ফেলা হয়েছে। বড় ফুফু কে জিজ্ঞেস করলাম এই গাছটির সব ডাল কেটে দিলেন কেন? গাছটাকে তো নগ্ন নগ্ন লাগছে। ফুফু বলল শীতে উঠোনে রোদ আসেনা তাই রোদের জন্যই কেটে দিছে সব। আমি বললাম তাই বলে এই ভাবে কাটবেন, এই গাছ টাই তো গ্রীষ্মের কড়া রোদে তোমাদের ছায়া দিয়ে যায়। এর ছায়ায় বসে এক বুক শান্তি হজম কর আর প্রয়োজন ফুরাতেই তার প্রতি এমন বিরূপ আচরণ। আমার চোখ পড়ল গাছের গোড়ার দিকে, গোড়ার অবস্থা আরোও করুন, ছাল নেই একটুও, কারা জানি সব ছাল ছিলে নিয়ে গেছে, গাছের কাঠ বের হয়ে গেছে। মানুষ কে চাবুক পিঠা করার পর শরীর থেকে ফুটে ফুটে রক্ত বের হলে যেমন দেখায় গাছটির জায়গায় জায়গায় শুকনো কসের দাগ। ফুফু কে বললাম গাছের গোড়ার এই অবস্থা কেন? ফুফু বললেন, তোমার ফুফার বছর তিনেক আগে হার্ট এট্যাক হয়েছিল, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর কেউ একজন বলেছিল অর্জুন গাছের ছাল জলে ভিজিয়ে সেই জল খাওয়া নাকি হার্টের জন্য ভালো, তারপর থেকে তোমার ফুফা প্রতিদিন সকালে
ছাল ভিজানো জল খায়। আমি বললাম ফুফা কি একাই এত ছাল ছিলে নিল। ফুফু বললেন তোমার ফুফা একা খায়না, বাড়ির অনেকেই খায়, প্রায় সব পুরুষ মানুষ ই খায়। আমি বললাম সবারই কি হার্টের অসুখ? ফুফু বলল না, এগুলো এমনি খেলেও ভাল। আমি বললাম খাবেন খান সমস্যা কি, গাছটাকে তো একটু ভালবাসা যায়। গাছ কথা বলতে পারেনা, প্রতিবাদ করতে পারেনা দেখেই কি এই নির্মমতা। গাছটির জন্য বড় মায়া হলো আমার। হঠাৎ ডান দিকে তাকাতেই দেখি ভাবি, আমার ফুফাতো ভাইয়ের বউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছেন, দশ বছর আগে উনার বিয়েতেই শেষবার এসেছিলাম ফুফুর বাড়ি। ভাবির চোখে মুখে কষ্টের চাপ স্পষ্ট। ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম ভাবি কেমন আছেন?
ভাবি একটা কষ্টের হাসি দিয়ে বললেন এই অর্জুন গাছটার মত আছি।