প্রথমে এল অন্ত্যমিল কবিতা। চরণে চরণে মাত্রা ভেঙে, ছন্দ ও অন্তমিল বজায় রেখে যা লেখা হচ্ছিল তাই অন্ত্যমিল বা ছন্দমিল কবিতা। এতে আবার অনেক নিয়ম শৃঙ্খলা আছে। এক্ষেত্রে বাংলা স্বর বা ধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১. বদ্ধস্বর
২. মুক্তস্বর
শুধু তাই নয়, অন্ত্যমিল কবিতার ছন্দ আবার প্রধানত তিন প্রকার।
১. স্বরবৃত্ত ছন্দ
২. মাত্রাবৃত্ত ছন্দ
৩. অক্ষরবৃত্ত ছন্দ
এর পরে কবিতাকে এত নিয়মের বাঁধনে বাঁধতে মন চাইল না। এল গদ্য কবিতা। ভাবনাটাই বদলে গেল। গদ্য কবিতার মূল সুরটা কি ? অন্তমিল ও ছন্দের জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে ভাব ও মাত্রাগত জায়গাটিতে ঠিক থাকলেই কবিতা।
আসলে আমার মনে হয় অন্ত্যমিল কবিতা বা গদ্য কবিতা এটা বড় ব্যাপার নয়। আসল কথা কবিতার বক্তব্য কতটা ভেতরে গিয়ে লাগল। শব্দগুলো কতটা পোড়াল, কতটা কাঁদাল কিংবা হাসাল ওটাই কবিতার সংজ্ঞা নির্ধারণে এযুগের মাপকাঠি। বিষয়ভেদে যা আবার পরিবর্তিত হয়ে যায়।
এখন নাকি চলছে মুক্তগদ্য। সেটা আবার কি প্রকার? এখানে সাধারন গদ্যের মত কোন শুরু অথবা উপসংহারের প্রয়োজন নেই। মনে কর, শুরুটাই এইভাবে হল - 'আমি যদি জলের সাথে যোনি শব্দের তালমতো প্রয়োগ করতে না পারি তবে বাক্য শব্দদুটিকে বমি করে বিচ্ছিন্ন করে দেবে, সত্যি। কবিতায় শুধু নয় আধুনিকতা- উত্তরাধুনিকা সবখানেই আছে। আধুনিকতা কোনো দৃষ্টিভঙ্গি নয়, এটি সময়। কিন্তু উত্তরাধুনিকতা একটি দৃষ্টিভঙ্গি।'
অথবা,
'হ্যাঁ চুরি করেছি। অন্ধকার চুরি করতে ভালো লাগে। বই আর ফুল চুরি করতেও ভালো লাগে। এইবার জীবনানন্দ শোনাই, এখানে পালঙ্কে শুয়ে কাটিবে অনেকদিন জেগে থেকে ঘুমাবার সাধ ভালোবেসে... স্বাতী, এখন রাত্রি তৃতীয়প্রহর, শামসুর রাহমানের লেখা আমার খুব প্রিয় একটা লাইন মনে পড়ছে, আমি দেখছি তোমার সিঁথি দিয়ে বেরিয়ে গেছে অন্তহীন উদ্যানের পথ...আর সুধীনদত্ত অসাধারণ কখনো। মনে পড়ে, একটি কথার দ্বিধা থর থর চূড়ে ভর করছিলো সাতটি অমরাবতী। এমন কম্প্যাক্টনেস আর হয় না।'
সেদিন একটা লেখা পড়লাম - 'আমি লিখলাম, তুমি উড়ে গেলে আমি ফুল হয়ে যাই; তুমি পুড়ে গেলে আমি ধোঁয়া হয়ে ছাই। এই গল্পটা আমার রক্তের ভিতরে যে গল্পের নদী আছে তার থেকে আমাকে দিলো একটি মৃগেল মাছ। মৃগেলের চোখে অশ্রু। তার অশ্রু নদীর ভিতর আমি দেখি, কেউ দেখে না।'
আমার মনে হল এ তো গদ্য কবিতা। অযথা কি-বোর্ডে এন্টার না মেরে, পর পর লিখে যাওয়া।
দেখা যাক, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়!