এমনিতেই কলকাতা ভুমিকম্প-জ্বরে কাহিল। যখন তখন কেঁপে উঠছে পায়ের তলার মাটি। এরই মধ্যে বাংলা সাহিত্যে সাম্প্রতিকতম ভুমিকম্পটি ঘটে গেলো কাল রাত সাড়ে ১১টায়। দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ার নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্য।
হৃদরোগের আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। চলে গেলেন এ যুগের অন্যতম জনপ্রিয় লেখিকা। রেখে গেলেন ২৪টির মত উপন্যাস আর অসংখ্য ছোটগল্প। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- ‘কাছের মানুষ’, ‘কাঁচের দেওয়াল’, ‘হেমন্তের পাখি’, ‘অলীক সুখ’, ‘দহন’ ইত্যাদি। তাঁর উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্রও রচিত হয়েছে।
সাহিত্যিক জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য। সেগুলোর মধ্যে ১৯৯৬ সালে জাতীয় পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে কথা পুরস্কার, ২০০০ সালে তারাশঙ্কর পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যর পৈত্রিক বাড়ি ছিল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। যদিও জন্মগ্রহণ করেন বাংলা ২৫ পৌষ ১৩৫৬ সালে (১০ জানুয়ারি, ১৯৫০) তার মামাবাড়ি পশ্চিমবঙ্গের ভাগলপুরে। কলেজে পড়তে পড়তেই বৈবাহিক ও চাকরিজীবনের শুরু। বহু ধরনের বিচিত্র চাকরির পর এখন সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছা-অবসর নিয়েছেন। সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ ছিল ছোটবেলা থেকেই, লেখালেখিতে আসেন সত্তর দশকের শেষভাগে। লেখিকার লেখায় নারীদের নিজস্ব জগতের যন্ত্রণা, সমস্যার কথা এসেছে বারবার; মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের নানা জটিলতার চিত্রও তুলে এনেছেন। আটপৌরে জীবনের সুক্ষ্ম ওঠা-পড়াগুলোকে নিপুণ সংবেদনশীলতায় তুলে এনেছিলেন।
ডান হাত ভাঙার পরে তা নিয়েও তিনি সাহিত্যচর্চা থামান নি। বাঁহাতে কি-বোর্ডে টাইপ করে লিখতেন। এবারের পুজোর লেখা লিখছিলেন তিনি। ভাবতেই পারছি না গোয়েন্দা মিতিন-মাসী আর আসবে না, ভাবতেই পারছি না তাঁর কলমের ছোঁয়ায় আর উড়বে না কোনও “হেমন্তের পাখি”। আমি নিজে তাঁর লেখার বিরাট ভক্ত ছিলাম। আমরা শোকস্তব্ধ।
সুচিত্রা দেবী, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।