‘হায়’, আজ তা শুধু স্মৃতিমাত্র, কিন্তু কী অপরূপ এক গ্রামীণ দাম্পত্য চিত্র৷ বিরহিণী পল্লীবধূ আপন মনে নদীতে স্নানলীলা সেরে জল ছপছপ শাড়ি সামলে ঘরে ফেরার একলা পথে হঠাৎ দেখে তার প্রবাসী স্বামী৷ হর্ষে লাজে সে তার মধুর ঘোমটাটানা মূর্তিতে নিজেকে ঢাকে৷ পথে আকস্মিক প্রিয়দর্শনের লজ্জা আর আসন্ন প্রিয়মিলনের হর্ষ তাতে বেপথু করেছিল৷ কিন্তু সে তো সেই কবেকার কথা! হায়!
আজকে বরং এই ঘনিয়ে আসা গ্রাম্য সন্ধ্যার পরিবেশে বড় বেদনার মতো মনে বাজে এই কথা যে,
এই ঘাটে ওই গাছের পাশে তটিনীর ওই শ্যামল কূলে
দিয়েছি সেই স্বর্ণলতায় আপন হাতে চিতায় তুলে৷
এখনও সেই চিতার ’পরে শিথিল বকুল পড়ছে ঝরে
আজও মধুর মুখখানি তার দেয় যে বাধা সকল কাজে৷
পঞ্চাশের দশকে এই গানটা যখন সবাই শোনে বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনে ইন্দুবালার কন্ঠে, তখন চোখ ভরে গিয়েছিল জলে অনেকেরই৷ খুবই সেন্টিমেন্টাল কাহিনী, তবে ভারী আম্তরিক বয়ানে লিখেছিলেন একনিষ্ঠ পল্লীকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক৷ যাকে বলে মর্মস্পর্শী রচনা ও তেমনই গায়ন৷ এখন কোথায় ইন্দুবালা, কোথায়ই বা পাব সেই রেকর্ড! তবে মাঝেসাঝে দূরদর্শনের পর্দায় চমৎকার মায়াভরা দরদে গানটা শুনতে পাই বাংলাদেশের ইফফাত আরা দেওয়ানের দরদী গলায়৷ বড় যত্নে মেয়েটি পুরাতনী গায়৷ গানটা যত না শুনি, তার চেয়ে অপেক্ষা করে থাকি গায়িকা কখন বলবে ‘হায়’৷