এ সব নানা গানের ভিড়ে একটা গানের কথা আমরা বোধহয় ভুলেই গেছি৷ গানটি হল ‘ওরে মাঝি, তরী হেথায় বাঁধব না কো আজকে সাঁঝে’৷ কী যে অনবদ্য বেদনাবিধুর এক কাহিনীগান এটি! কী করুণ আর সম্তপ্ত এক পত্নীবিয়োগকাতর তরুণ স্বামীর স্মৃতিবহ গান, যা গত শতাব্দীর দুইয়ের দশক থেকে এ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে পা রেখেও সমানভাবে হৃদয়স্পর্শী৷ রেকর্ডে গানটি গেয়েছিলেন ইন্দুবালা৷ সেই বিচারে এই গানকে বলতে হবে পুরাতনী বাংলা গান৷ গানের চালটাও বেশ ওস্তাদি ধাঁচের৷
গানের বিন্যাস অনেকটাই কবিতার মতো, যথা–
ওরে মাঝি তরী হেথায় বাঁধব না কো আজকে সাঁঝে
ভিড়িও না চলুক তরী নদীর ঘাটে৷
তবে কুশলী সুরকার ‘ওরে মাঝি’ বলে এমন একটা তান দিয়েছেন যে, ওটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে গানের মুখড়া বা আস্হায়ী৷ বোঝাই যাচ্ছে, কোনও নৌকার একক একজন যাত্রী কিছুকাল ধরে উদ্দেশ্যহীনভাবে অস্হিরচিত্তে চলেইছে চলেইছে নদী স্রোতবেগে৷ কেবল কোথাও সন্ধে হলে সেই গ্রামে তরী ভিড়িয়ে বিশ্রাম নিয়ে পরের সকালে আবার চলা৷ কিন্তু এখন আপাতত যে গ্রামের নদীকূলে সন্ধ্যালগ্নে নৌকো পৌঁছেছে, যাত্রী সেখানে ভিড়তে মানা করছে কেন? কারণটার একটা আভাস ধরা আছে নানা সঙ্কেতে৷ যেমন–
ওই গাছে ওই বকুল গাছে জলটি যেথায় ছুঁয়েই আছে
এখনও যে ওই ঘাটেতে পল্লীবালার কাঁকন বাজে
মৌন সাঁঝের ম্লান মাধুরী কতই ব্যথা আনছে ডেকে
গ্রামের ছোট দীপটি প্রাণে বিষাদ ছবি দিচ্ছো এঁকে৷
একটি গৃহ হেথায় কিনা ছিল আমার বড়ই চেনা
ছবিটি যার আজও আমার হৃদয় কোণে সদাই রাসে৷
করুণ কাতর সুরে মোড়া গানের এই স্তবকের পরে ইন্দুবালা গভীর দীর্ঘশ্বাসে একটা মোচড় দিয়ে গাইতেন ‘হায়’৷