আমাদের অপর স্বীকার্য বিষয় হইল বাংলাভাষায় যাবতীয় ভুলের কোন না কোন ভুলের সহিত প্রত্যেক মানুষই জড়িত।

যদি বলি ছাত্ররাই এই ভুল ভ্রান্তি করিয়া থাকে তবে তাহা সত্যকথন হইল না। এই ভ্রান্তি ছাত্র মায় বিখ্যাত কবি, দার্শনিক, লেখকগনেরাও করিয়া গেছেন। তথাপি তাঁহাদের, সেই সব    স্মরণীয় মহাপুরুষদের লেখনিজনিত ত্রুটি ধরিতে যাইবার সাহসীকতার চুড়ান্ত পর্যায়ে আমরা অদ্যাবধি উন্নিত হইতে অক্ষম, তবে তাঁহারাও যে বাংলা সাহিত্যের ভুল ত্রুটির জালে আটকাইয়া পরিয়াছিলেন এবং তাঁহারাও যে ভুলত্রুটির উর্ধ্যে তাহা স্বীকার্য নহে। অবশ্য কিছু অকালপক্ক কপোলপূর্ণকারী দুই একটি ইংরাজী শব্দ ছাড়িয়া কহিবেন - প্রমান কি ?

তবে বলা যাইতে পারে – সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত কপালকুণ্ডলা গ্রন্থে জনৈক বৃদ্ধ কি বলেন নাই – ‘মাঝি আজ কতদূর যেতে পারবি?’ সাধু চলিতের (গুরুচন্ডালী) ভুলে তিনিও কি আটকাইয়া পরেন নাই?

অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয় কি শ্রীকান্ত গ্রন্থে লেখেন নাই – ‘সশঙ্কিত হইয়া সেদিকে ইন্দ্রের মনোযোগ আকৃষ্ট করিলাম’। উক্ত “সশঙ্কিত” বলিয়া কোন শব্দ অন্ততঃ বাংলা সাহিত্যে নাই। অন্ততঃ সেই যুগে তো ছিলই না।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি শাস্তি গল্পে “নিরপরাধী” শব্দের ব্যবহার করেন নাই ? শব্দটি হইবে নিরপরাধ।
কিংবা
গল্পগুচ্ছের (২য় পর্ব) “নষ্টনীড়” গল্পে কি প্রথমে উচ্চারিত অথবা নামাঙ্কিত ‘উমাপতি’ কী গল্পসায়াহ্নে ‘উপাপদ’তে রুপান্তরিত হয় নাই? হইয়াছে !

তবে তাহা হইলেও একথা স্বীকার করিতেই হইবে যে উক্ত মহাপুরুষরা নিজ নিজ স্বমহিমায় সকল ভুলত্রুটি শুধরাইবার ঊর্ধ্বে আসীন।