মৃত্যুর খুব কাছাকাছি আজ দাঁড়িয়ে আছি,
ভাবি এতটা সময় কিভাবে পার করলাম।
কি নিয়ে যাচ্ছি,এই ধরিত্রীকে কি দিয়ে যাচ্ছি,
সময় চলেছে আর তার মোহে আমিও চললাম।
প্রতিটি স্থানে নিজের অস্তিত্ব রাখার পদক্ষেপ,
আমায় খুব ভাবিয়ে রেখেছিল এখনো বিদ্যমান৷
হয়তো আর কদিন কয় সেকেন্ড মিনিট রবে প্রাণ,
তারপর সকল কিছুর অবসান ঘুচবে আক্ষেপ।
প্রতিদান মান-অভিমান শেষ হবে স্বস্তির নিঃশ্বাস,
এই ছুটে চলা,চিৎকার করা,সব হবে নাশ-বিনাশ।
অভিমানীর সেই কথাগুলো না রাখতে পারা,
সখের লাল পদ্ম উপহার দিতে মানা করা।
গুন গুন করে গান গাইতে পারার আনন্দ,
সব বিলীন নিশিতে হবে ক্লান্ত,হারাবে ছন্দ।
জোর করে মনের অভ্যন্তরে প্রিয়াকে দেয়া স্থান,
যদিও সে কখনও আমার প্রিয়তমা হয়ে ওঠেনি।
তবুও তার পিছু সংগ্রাম, প্রেম ছিল মূল্যবান,
সেসব কিছু হবে নীরব,থামবে প্রচেষ্টা সবখানি।
অস্ফুট স্বরে কেউ আর আমার ঘরে এসে,
কড়া নাড়বে না, বলবে না কথা পাশে বসে।
আদর দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে না,
মায়ের চুমু নিষ্ফল দেহে, অল্প ছাপ ফেলবে।
কিন্তু আমি তা আর অনুভব করতে পারব না,
বিপর্যয় আমায় চারদিক থেকে ঘিরে ধরবে।
বাবার চিৎকার,বুকে চাপা কান্না আমার কানে,
আর প্রবেশ করবে না,রাগে হেসে আদর
করবে না কেউ আর বলবে না,'ঠিক বাঁদর',
আকাশে শুধু পানি জমবে,চোখের কোণে।
বোনের পালিয়ে বেড়ানো,হাসি বিনোদন,
পালিয়ে যাবে আমার থেকে শত যতন।
হঠাৎ ভয় আর কেউ দেখাবে না আমায়,
কারণ পরের জীবন হবে আনন্দে বা কান্নায়।
মিনিট খানেক অনুভূতি হারিয়ে হয় বেদনা,
চোখের জলে ঝাপসা,পুরো আচ্ছন্ন এই ধরা৷
আমাকে কেউ আর নাগালের মধ্যে পাবে না,
দূর দেশের যাত্রী হয়ে যাব আমি,কাঁদবে পাড়া।
পূর্ণিমার রাত, মধ্যরাত আর আমি একা,
বসে শুন্য নিস্তব্ধ পৃথিবীর বুকে কবিতা,
লিখতে পারব না,মনের অনুভূতি রবে ফাঁকা,
স্বরণ থাকবে কি,সেদিনে স্রষ্টার সাথে কথা!
আর কি হবে গণমানুষের, সমাজের জন্য ভাবনা,
চলতে চলতে শূন্যস্থান পূরণ করার খুব ইচ্ছা।
জয়ের ধ্বনির উচ্চারণ কি আর হবে শোনা,
নাকি মৃত্যুর আবর্তে ধ্বংস হবে আমার সদিচ্ছা।
গভীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলি,ভাবি হব নিঃশেষ,
পৃথিবীর প্রাণ-জগত থেকে হবে আমার শেষ।
বিদায় দিতে হবে এই বৃহৎ খেলাঘর ছলনা,
প্রদীপের আলো আমায় আর আলো দিবে না।
মহাজ্ঞানী স্রষ্টার ইচ্ছাতেই হবে আমার বিদায়,
সম্পর্কগুলো মলিন হবে,কাঁদাবে নিরবে আমায়।
বন্ধুত্বের সন্ধিক্ষণগুলো স্মরণে ব্যথা দিবে কি!
হৃদয়ের গভীর থেকে তাদের আমন্ত্রণে ডাকি।
আমার শেষ স্পন্দন পর্যন্ত সঙ্গ দিও প্রিয়,
আমি প্রাণ দিয়ে দিব তোমার কল্যাণে।
শুধু আমাকে প্রনয়ের বাঁশির সুর দিও,
আলিঙ্গন অধ্যায় মাঝে স্থান দিও চরণে।
আমার সুরের বাক্য অথবা শব্দের অংশ,
তোমাদের প্রেম আলাপনে বাঁচুক সহস্র বিংশ।
রোমাঞ্চ ক্ষণে দুটি চোখের দৃষ্টি থাকুক ঘিরে,
সত্যের সংস্কৃতি চিরকাল নিজের আপন করে।
আমি থাকি আর নাই বা থাকি এই গ্রহে,
সমাধির পূর্ব পর্যন্ত ভালবাসা থাকবে দেহে৷
তারার উজ্জ্বলতায় পৃথিবী হবে পবিত্র প্রাঙ্গন,
সংশোধন করব,হবে সত্যের আদলে উদ্বোধন।
মৃত্যুর খুব নিকটে এসে ভাবছি নিত্যনতুন,
গল্প সাজাচ্ছি আগামীর যেন হয় উত্তম সৃজন।
সঞ্চয় আগামীর শুভ কীর্তির, দূর হোক ভয়,
সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় যেন দুঃখ হয় লাঘব,নিরাময়।
প্রিয় তোমার মনে কি আমার আমি মৃত্যুর পর রবে,
অতীতের সেই প্রেমিক হয়ে রব,নাকি অন্যকে গড়বে!
প্রশ্নের উত্তরে দাবী-দাওয়া ভুলে পাতার শব্দ শূন্য,
মরনের ওপারে গেলে,ভালবাসা দিও আমার জন্য।
পদ্ধতির গ্রহণ বর্জনের দিকগুলো করিও গ্রহণ-বর্জন,
মৃত্যুর পূর্বক্ষণে,ভেবে আজ আমি ভালো-মন্দ সচেতন।
শেষে কি নিয়ে যাব,ভেবে মরি,গড়ি ভাবনার পাহাড়,
শূন্য হাতে যেতে হবে,থাকবে না বিলাসিতার আহার।
শূন্য আমি, নিথর দেহে থাকবে না এ প্রাণ,
কর্মের স্বচ্ছতা দেবে কি আমায় স্বস্তি,মান!
পরিণতির শেষ লগনে সকল হিসাব-নিকাশ,
হয়েছি কি আমার আদালতে আমি বিকাশ!
মেয়াদউত্তীর্ণ পণ্যের যেমন থাকে না মূল্য-দাম,
মৃত্যুর পরে আমার এ দেহের থাকবে না সুনাম।
পাহাড়ের চূড়ায় উঠে, গভীর রাতে খুবই ভাবি,
আমি কি হতে পেরেছি,আগামীর সত্যের রবি।
হাজার প্রশ্ন আমার মনে ঘুরে বেড়ায়,
আমি কি আছি,কি হব ,কোথায় যাব?
সন্ধিক্ষণ শেষ হলে কোথায় হবে বিদায়!
আমি কি স্রষ্টার সৌজন্য-সাক্ষাৎ টুকুও পাব?
বিবর্তন দুনিয়ায় আমার আমির কতটুকু পরিবর্তন,
হলাম কি বিশ্বের স্বতন্ত্র কোনো বুদ্ধির সহায়ক জন!
নাকি নষ্ট করলাম জৈব-সত্তার মান,প্রতাপ,সম্মান,
ভাবি,সত্যির বিস্তার বিবর্তনে কতটুকু পেলাম স্থান।
উত্থান-পতনের দরবারে আমি কি উত্তম সহচার্য!
নাকি গা-ভাসিয়ে ছিলাম লোভীজনের আচার্য?
জাগতিক শান্তির জন্য ধন্য হয়েছি বারবার,
পুনর্গঠন করেছি কি আত্মার সমৃদ্ধির পাহাড়!
জীবনের সায়াহ্নে এসে ভাবি কতটুকু রেখে যাচ্ছি রবি,
মৌলিক অবদান শূন্য,শুধু কি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সবি!
চিন্তা-ধারায় প্রভাব আমার, ছিল কি সৎ, সত্যের!
নাকি মিথ্যার বিকাশে আমি বিক্রি হয়েছি অর্থের?
হয়তো আবার ভাবনার উদ্দেশ্যে হবে ভ্রমণ,
ভালোর অভিব্যক্তির আলোকে হবে গমন।
সমাজ-ভাবনা আমার সাধনার অন্যতম ঘটনা,
শান্তির আত্মহত্যার পূর্বেই সংশোধন-পর্ব রচনা।
আমার মৃত্যু হয়তো বিচ্ছিন্ন ঘটনার উদাহরণ,
হবে আমার সত্যের আদর্শ নিয়ে আন্দোলন।
যান্ত্রিক সম্পর্কের বলিদান দিতে পরিবর্তন,
আত্মার সম্পর্কের গভীর অনুসন্ধান বিশ্লেষণ।
আমি খুব চিন্তিত মৃত্যুর পূর্ব লগনের রাতে,
শান্তি রেখে যাচ্ছি,নাকি নিয়ে যাচ্ছি সাথে!
বিশাল ফাঁকার অভিযোজনে শান্তি কি মিলবে?
শুকনো পাতার শব্দে আমার নাম কি উচ্চারিত হবে!
সন্ধ্যার সূর্য,কি হবে দেখা আর একাকী গোপনে,
নীরবের গোধূলি আভার সাথে কথোপকথনে।
আর আধ্যাত্মিক মোহের হবে কি পর্যাপ্ত বিচরণ!
নাকি এ সন্ধ্যার আস্তরণে মিলিয়ে যাবে আবরণ?
ভাবি কখনও হবে কি ফেরা পৃথিবীর পৃষ্ঠে,
কেউ কি নিবে আমার নাম কোমল ওষ্ঠে!
বিনয়ের সৌজন্যবোধ হবে কি আমার বাগানে!
নাকি অন্ধকার করে মেতে যাবে মন্দের ব্যাপনে?
আমি অন্তিম মুহূর্তের প্রস্তুতির সময়ে,
খুব ভাবছি,কেউ কি সাথে যাবে আমার?
যত্ন করে ডেকে উঠাবে,খেতে ডাকবে আবার!
নাকি আমার মুখ ভুলে চিত্রাংকন করবে ভয়ে?
আমি আদিম সৃষ্টির কথা ভাবি শেষ মুহূর্তে,
অদ্ভুত করে জন্ম নেয়া আমি বড় হয়েছি মর্তে।
বাবা-মায়ের পদার্থে গঠিত আমার শরীর-দেহ,
রূপান্তর শেষে সেই 'আপনা'কে ভুলেছে মোহ।
আশ্চর্য সত্তার বিস্তার পৃথিবীর কোণে কোণে,
ক্ষেত্রবিশেষে উন্নতমানের প্রাণী রয়েছে ঘনবনে।
নির্লজ্জ মানুষ নষ্ট ফানুস উড়াতে ব্যস্ত, উন্মাদ,
দেয় না,আপনজনের ভাতের যোগানে, স্ব-বাদ।
বিধিমালা বুননে ব্যস্ত উঁচু মহলের আবিষ্কারক,
দেহের রক্তচাপ অগ্নির দ্বার-প্রান্তের গ্রাহক।
আমি কি তবে তাদের দলের প্রতিনিধি,
নাকি সঠিক মাত্রায় দাতাদলের গতিবিধি?
আমি ভাবি,পৃথিবী আমার,নাকি উন্মাদের,
মানব-প্রেমী উন্মাদ হোক,বাঁধা নাই তাদের।
উন্মাদ তারা,যারা স্বার্থের জন্য শ্রেষ্ঠ করে ধ্বংস,
আমার সংসারের সজীবতার কর্মী হচ্ছে নির্বংশ।
এসব ভেবে আমার দেহের রক্ত কণিকারা কাঁদে,
দেশের কৃষাণীরা শূন্য পাতিলে শূন্যতা রাঁধে।
আমি কি করলাম, কি দিলাম এই ধরাকে,
হিসাব শেষে, ফলাফল কে তাহলে আঁকে?
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে নিতে ভাবি,
মৃত্যু আমায় শান্তি দিবে নাকি ভ্রান্তি!
অতি দ্রুততা আমাকে থামিয়ে করেছে জড়,
আমি সত্যিই আজ শেষ মিনিটে অসহায় বড়!
ব্যক্তিত্বের বিস্তার খুব কম মানব বাজারে,
শক্তির ভক্তি বাড়ছে অসৎ সঙ্গের কাতারে।
পরিশ্রমী মানুষের কদর,নির্বাসনে হিমালয়,
লোভী,প্রতারকে ভরা সমস্ত আয়োজনালয়।
ভাবি কি হবে আমার এবং এই দেহের আনন্দ,
কীর্তি যদি হয় ভাল,তবে খেতে হবে না গালমন্দ!
শেষে প্রস্তুত মনে হয় নিজেকে,তবুও ভিন্ন ভাবনা,
জানি কখনও শেষ হবে না আমার এই তীব্র যন্ত্রণা।
আত্মার শ্রদ্ধা হবে কিনা জানি না মৃত্যুর পর,
তবে আমার সমস্তটা জুড়ে থাকবে মাটি কবর।
দেহ জুড়ে হবে অন্যজনের বাস,হব ভিন্ন এক আবাস,
তবে কি আমি আর দেখতে পারব না প্রিয়-আকাশ!
প্রশান্তির আস্তরণে যদি আবৃত হয়ে যাই,
তবে আমাকে আর কেউ কোনদিন পাবে না।
শত চেষ্টা সত্ত্বেও আর কখনো ফেরানো যাবে না,
সমাপ্তিতে আক্ষেপ থেকে যায় শুধু অপূর্ণতায়।
সমষ্টি ভেঙ্গে কি এ দেশ,দেশের মানুষ হবে ভিন্ন,
আত্মভিমানে পৃথক নৌকায় করবে ভ্রমণ,হয়ে ছিন্ন।
নাকি দলের রক্ষক,সৈনিক হয়ে একত্রে ধরবে পাল,
দেখতে পাব কিনা জানিনা,তবে হোক একত্রিত কাল।
সেদিন হয়তো,ভোরের শিশির নিজের মতই উঠবে জেগে,
আর আকাশ কালো করে ধরাকে আলিঙ্গন করবে মেঘে।
শত নবীন উদ্ভিদে ভরবে ভূমি ,ক্রমে ক্রমে হবে শোভিত,
নতুনত্বের কলরবে উচ্ছ্বাসিত হবে চারিদিক, হবে মুখরিত।
কিন্তু আমি তোমাদের মাঝে থাকব কিনা জানি না,
আমার পৃথিবীর মৌন অনুভূতিগুলো আত্মার আয়না।
তবুও গুটিকয়েক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে এই দিলে,
তবে কি আমি পাব সেই মিলনের দেখা,পুরনো ঝিলে!
আমার খুব ইচ্ছা,তোমার সাথে বসে বলব কথা,
ভাঙব মনের প্রাচীর,সহস্র বছর লুকানো প্রথা।
তুমি অবাক হয়ে দেখবে আমায়,আমার মুখ,
খুব জানতে চায় এই প্রাণ,বুঝবে কি আমার দুখ!
সত্যি করে চাইতাম তোমায়,খুব করে চাইতাম,
হয়েছিলে ক্ষণিকের জন্য শুধু সমীকরণের নাম।
মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে ভাবি যদি আমি হতাম পূর্ণ,
তবে সংশয়ে থাকা মন থাকত না আর ভাঙ্গা,জীর্ণ।
শেষ কিছু সময় প্রকৃতির কাছে দাঁড়িয়ে লিখছি,
শোনাচ্ছি তাকে মনের যত কথা,প্রাচীন বলছি।
প্রকৃতির যত স্মৃতি,মনের উত্তাল ঢেউয়ে দিচ্ছে ভীতি,
আরেকটু সময় পৃথিবীর বুকে বিচরণের তীব্র আকুতি।
মিনতি শেষের কবিতায় লিখো আমার নাম,
সংগ্রহের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে খুব লাগছে একা একা।
সময়ের তীরে একবারও কি হবে না তোমার দেখা,
নাকি আজও ভুলের তীর ছুড়বে বুকে, দিবে দুর্নাম।
শেষের উপন্যাসে অতি বিনয়ের সাথে বলছি,
জীবনের বড় সময়টা জুড়ে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা।
তবুও জানি ফিরতে হবে অজানায়, ছেড়ে আশা,
রাতের অন্ধকারে নীরব হয়ে শুনো,আমি ডাকছি।
খুব যদি আশার কুঠুরিতে,আমি হই খুব বেশি উদিত,
বাহিরের পরিবেশ দেখো ঘরের ছোট জানালা দিয়ে।
আমি মিশে থাকব এই প্রকৃতির প্রতিটি বিন্দুর গায়ে,
আমার এ দেহ শেষ হবে, কিন্তু গল্প হবে না অস্তমিত।
১০ অক্টোবর, ২০১৯।