আবারও কোন এক ভ্রান্ত বিকেলে-
আমি গিয়েছিলাম ছুটে তোমার খোঁজে,
সেই অনেক কালের মতো করে
অবচেতন মনে, তোমাদের সেই
বাগান বাড়ির উঠোনে।
বকুল গাছটা আজও ঠিক
তেমনই দাঁড়িয়ে, জীর্ণ শীর্ণ।
বললো হেঁসে যেন আমায়,
এতো দিন কোথায় ছিলে ?
পুকুর ঘাটটা কেমন ময়লা জমাট বেঁধে,
শেওলা কাঁদায় নিয়েছে যেন দখলে,
ঐ লাল দিঘীটা।
তোমাদের মাটির উঠোনটা, যেখানে
বৃষ্টি এলেই আমরা হামাগুড়িতে
কতো কাঁদা ছড়াতাম গায়ে!
সেখানে এখন অভিজাত পাথুরে মাঠ,
থরেথরে সাজানো বিলাসী গাড়ির বহর।
এতটুকু মাটির দেখা মেলেনা কোথাও
যে বৃষ্টি এলে কাঁদা মাখাবো গায়ে,
সবখানে শুধু ইট পাথরের রুক্ষতা।
তোমাদের সেই কাঠের বনেদী
দোতলা বাড়িটা এখন আর নেই,
সেখানে এখন ঠায় পেতেছে
আধুনিকতার ছোঁয়া, মস্ত ফ্ল্যাট দালানেরা।
দোতলা বাড়ির উত্তর দিকটায়
ছিলো মঞ্জু মামার রুম,
পাশে ছিলো বিরাট আমলকী গাছটা,
খিড়কী দিয়ে যেন ঘরে ধুকে যেতো।
রোজ সকালে ঘুম ভাঙতো আমার
মামার রেওয়াজের সুরে,
তানপুরার সুমিষ্ট ঝংকারে।
মিষ্টি ভোরের পবিত্রতা বাড়িয়ে
সেই সুর যেন এক মোহনীয় আকর্ষণে
আমায় টেনে নিয়ে যেতো
তোমাদের পুকুরের পাকা ঘাটে।
আজ সেই জানলাটা খুঁজতে গিয়ে,
চোখে পড়ে কবুতরের খোপের মতো
তোমাদের আয়েসী জীবনের -
এয়ার কন্ডিশনের বাক্সগুলো।
বুকের ভেতর চেনা স্মৃতিরা সব
ব্যাথা হয়ে বাজে, নির্জল কান্নায়।
বিশাল এক তৃণভূমি ছিলো
তোমাদের বাড়ির পিছন দিকটা জুড়ে,
এই শীতে সেখানে জুটতো এসে
হাজার হাজার অতিথি পাখিরা।
কতনা আনন্দের রোল পড়ে যেতো আমাদের
কচি মনে, সাঁজ সকালে রৌদ পোহাতাম যখন, ঐ বিস্তীর্ণ বিলের বুকে।
অথচ আজ সেই বিলের কোন অস্তিত্বই আর
পড়েনা চোখে, চোখের দৃষ্টিপটে বাঁধা হয়ে আসে
শুধু নব্য নির্মাণাধীন কংক্রিট দালান সারি।
এভাবেই বুঝি কালের স্রোতে
হারিয়ে যায় সোনালী অতীত।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে দিনের বিলুপ্তিতে,
কেটে যায় ঘোর আমার তোমার খোঁজে আসার।
পিচঢালা পথের বুকে অনিচ্ছুক পা’ফেলে
নীরবে ফিরে আসি, আবারও
তোমার দেখা না পেয়ে।
বুক চিঁড়ে উতরে আসা দীর্ঘশ্বাস চেপে রেখে,
এই বিংশ শতাব্ধীর আধুনিক শহরে।
অখন্ড ভগ্নাংশ
Isolate Isthmus