আজ সবার মুখে তৃপ্তির হাসি।
সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু চিৎকার করে জানিয়ে দিচ্ছে
স্বমহিমায় নিজের আগমনী বার্তা।
বীণার সুমিষ্ট সুর তার আগত ধ্বনি।
হৃষ্টপুষ্ট দেহ ; সুতীব্র, বলিষ্ঠ, বজ্রের ন্যায় তার মুষ্টি।
বনে সবুজ পাতার বিভেদ দিয়ে বেড়িয়ে আসা রৌদ্রের মত
সোনালী উজ্জ্বল হাসি আজ সবার মুখে।
কেউ বলছে সে ডাক্তার হবে,কেউ বলছে উকিল,
বাবার স্বপ্ন সে হবে বুর্জোয়া প্রশাসনিক ক্যাডার।
জন্মদাত্রী তখনো রক্তাক্ত, হীরার মত জ্বলতে থাকা আনন্দাশ্রু
ফোটায় ফোটায় কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্তাক্ত মাটিতে।
নয় মাস ধীরে ধীরে নিজের জরায়ুতে বেড়ে ওঠা সত্তা
চিৎকার করে জানিয়ে দিচ্ছে তার মাতৃত্ব,তার অধিকার।
সে চিৎকার করে বলছে, রাতের পর রাত জননীর নির্ঘুম জেগে থাকার কথা ।
সে চিৎকার করে বলছে, দিনের পর দিন মায়ের অম্ল নি:সরণ, উপবাসের কথা ।
সে চিৎকার করে বলছে, ঝর,বৃষ্টি, খরায় গর্ভধারিণীর দৃঢ়তার ইতিহাস।
সে চিৎকার করে বলছে, তার বেড়ে ওঠায় আত্নত্যাগীর ত্যাগের মহিমা।
সে চিৎকার করে বলছে, ছোট্ট কাপড়ে সুতার বুননে আঁকা মায়ের স্বপ্ন।
আজ সবার মুখে তৃপ্তির হাসি।
এক জাহান্নামের কষ্টের চিহ্ন নিয়ে ধুসর মাটির উপর পরে আছে
গর্ভধারিনীর অন্থ:স্থিত অঙ্গের সতেজ,তাজা লাল রক্ত।
মায়ের স্বপ্ন তার সন্তান হবে কবিতার ফেরিওয়ালা।
তার ঝুড়িতে থাকবে হরেক রকম কবিতা।
ছন্দে ছন্দে সাজানো গোছানো কবিতা।
ছোট কবিতা, বড় কবিতা, প্রেমের কবিতা, আশার কবিতা।
সুশ্রাব্য ছন্দে জীবনের কবিতা, আত্নত্যাগের মহান ওফাতের কবিতা।
এ কবিতায় থাকবে, হাজার বছরের দাসত্ব হতে মুক্তির দিশা।
এ কবিতায় থাকবে, নতুন পুষ্পিত জীবনের মাতাল সুবাস।
এ কবিতায় থাকবে, নিজ সৌন্দর্য বিকশিত করার অলংকার।
এ কবিতায় থাকবে, প্রেমিক শ্রোতার সুশ্রাব্য ছন্দ।
এ কবিতায় থাকবে, অদেখা ভয়ের দেয়াল ভাঙা হাতুড়ির শব্দ।
হয়তো এ কবিতা গুলোতে নতুন কিছু নেই, তবে থাকবে না-
সভ্যতা বিকাশে লিঙ্গ,শ্রেণি বিভাজনের নির্মম স্তুতির রসিকতা;
রূপকথার রূপনগরে কল্পিত রূপের বর্ণনা;
সমাজে ফাটল রেখা টানার জুজুর ভয়।
থাকবেনা, চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় মন ভুলিয়ে আতপ লুটের চেষ্টা।
কবিতার ছন্দালংকারে ঝন ঝন করে বাজবে প্রেমের নূপুর,
গুনগুন করে শোনাবে মানবতার গান, শোনাবে মুক্তিকামী দাসের পায়ের ধ্বনি।
কবিতার ছন্দে ছন্দে চরণে চরণে খোদিত থাকবে-
লক্ষ কোটি মানুষ হত্যায় নয়, আমি বীর হতে চাই কোটি প্রাণে মুক্তির মশাল জ্বেলে।
তার ফেরি করা সে কবিতায় সমাজে হবে দ্রোহের বিস্ফোরণ।
শিশুর বজ্র মুষ্টি ও তীব্র গর্জন দিয়ে যাচ্ছে তারই পূর্বাভাস।
তার কান্নায় সবার মুখে তৃপ্তির হাসি।
তার মায়ের স্বপ্ন তার সন্তান হবে কবিতার ফেরিওয়ালা।
আজকের কান্না, হুংকার হয়ে প্রতিধ্বনিত হবে নরকের দেয়ালে।
তার দৃঢ় মুষ্টি হাতুড়ি হয়ে গুঁড়িয়ে দেবে সেই দেয়াল।
সে কবিতার ফেরিওয়ালা হবে।
তাং ১১-১১-২০২৪ খ্রি.
সবুজ বাগ, সদর,রংপুর।