[সংক্ষিপ্ত ভূমিকা : অহ নওরোজ রচিত কয়েকটি রুবাই নিচে প্রকাশ করা হলো। রুবাইগুলো সংস্কৃত মন্দাক্রান্তা ছন্দে লেখা। সংস্কৃত ভাষায় 'মন্দাক্রান্তা শব্দের অর্থ 'ধীর পদক্ষেপ' বা 'ধীরে অগ্রসর হওয়া'। মন্দাক্রান্তা ছন্দ মূলত স্বরবৃত্ত ছন্দের উপরে ভিত্তি করে তৈরিকৃত একটি সুনিপুণ ছাঁচ। মন্দাক্রান্তায় প্রতি পংক্তিতে ১৭টি মাত্রা থাকে এবং তার মধ্যে মুক্ত মাত্রা এবং বদ্ধ মাত্রার সংখ্যাও নির্দিষ্ট। কালিদাসের 'মেঘদূতম্' কাব্য মন্দাক্রান্তা ছন্দে লেখা কাব্যের সবথেকে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মন্দাক্রান্তা ছন্দ বিষয়ে আলোচনা করা এখানে আমার উদ্দেশ্য নয় বলে এ বিষয়ে আর কথা বাড়াচ্ছি না।
অন্য দিকে 'রুবাই' বা 'চাহারগানা' মূলত ফারসি সাহিত্যে লিখিত কবিতার একটি ধরণ। ‘রুবাই’ শব্দটি ফারসি ভাষার এক বচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়; ‘রুবাইয়াৎ’ হচ্ছে এর বহুবচন। রুবাইয়ের বৈশিষ্ট হল : এই কবিতা চতুষ্পদী, প্রথম, দ্বিতীয় এবং চতুর্থ ছত্রে থাকবে অন্ত্যমিল। তৃতীয় ছত্রে অন্ত্যমিলের ব্যাপার কবির সিদ্ধান্ত।
সংস্কৃত ছন্দ আর ফার্সি কবিতার গঠনে লেখা কবিতাগুলোর পাঠ সুখের হোক]
২৫.
নির্জন চারপাশ; পাথুরে আলোহীন, বইছে নিশ্বাস; দূরের রাত,
সুনসান শয্যায় করেছি অপচয় স্বপ্ন-উৎসব; কোমল তাঁত।
উজ্জ্বল উষ্ণের সকালে তবু রোদ শূন্য নিদ্রায় অযান্ত্রিক—
জলহীন ভঙ্গুর শরীরে যেন হীম নড়ছে আকছার সবার হাত।
৪৪.
রঙিন সূর্যের আলোতে যেন দিন, করছে ঝলমল দারুণ আজ,
রোজকার ঠান্ডার সীমানা হলে শেষ, চিনবে নিশ্চয় শীতের ভাঁজ
সবগান নীলরাত, থাকে না চিরকাল, নিভবে একদিন সকল ঘ্রাণ
নির্মল নিদ্রায় ভুলো না তবু ওই স্বপ্ন দেখবার সবুজ কাজ।
৫২.
জলহীন ঘাসবন; সবুজে ভাসে মাঠ, কাঁপছে ঝিরঝির মাঝির পাল,
স্বপ্নের চারপাশ শরীরে গাঢ় আজ, ফাটছে সৌরভ; শরৎকাল।
জিভহীন লোকসব তবুও বেখেয়াল, খুঁজছে সুন্দর অনর্গল—
মেঘহীন মখমল কখনো যদি চাও; মেলবে একবার চোখের জাল।
৬৯.
আয়নার জোছনায় আলেয়া যেন সব; দৃশ্য বদলায় অজান্তেই
দিনভর নিজমুখ তবুও দ্যাখে কেউ; উষ্ণ সুখপায় একান্তেই।
এইসব অভ্যাস হতাশা মুছে দেয়; নিংড়ে আটকায় অহংকার—
প্রোজ্জ্বল-চঞ্চল আলোতে ভাসা হোক নিজকে দেখবার আনন্দেই।
১০৭.
ঝমঝম বৃষ্টির সকালে দেহ আজ; হচ্ছে বিছনায় জখম-খুন
শূন্যের মর্মর মগজে অতিকায় বাজছে বারবার—চিরন্তন।
জানলার কার্নিশ দেখেছে যেন সব, সাক্ষী রাখলাম তাকেই আজ
এইসব বর্ষায় তামাশা হয়ে যায় একলা থাকবার মানুষ-মন।